ইরান-ইসরাইল উত্তেজনার মধ্যেই সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালায় ইরান। এই বিমানঘাঁটি কাতারে অবস্থান করায় দেশটির সঙ্গে অনিচ্ছাকৃতভাবে জড়িয়ে পড়ে ইরান। হামলার ঘটনার পরপরই কাতার সরকার প্রকাশ্যে এ ঘটনার নিন্দা জানায় এবং ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল থানি এই হামলাকে তাদের দেশের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দেন। একইসঙ্গে তিনি জানান, তারা আশা করেন, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে।
এই অবস্থায় ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মসউদ পেজেশকিয়ান সরাসরি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে ফোন করেন। প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান কাতারের প্রতি দুঃখপ্রকাশ করেন এবং স্পষ্ট করে বলেন, আল-উদেইদ ঘাঁটিতে হামলা কাতারকে লক্ষ্য করে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসনের জবাবে চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কাতারের প্রতি আমাদের কোনো বিরূপ মনোভাব নেই। বরং আমরা কাতারকে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে দেখি এবং ভবিষ্যতেও এই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে।’
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘কোনো কাতারি নাগরিক বা স্থাপনায় আঘাত হানার ইচ্ছা আমাদের ছিল না। ইরানের লক্ষ্য শুধু এবং শুধু যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের জবাব দেওয়া। দুঃখজনকভাবে এই ঘাঁটি কাতারে থাকায় এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা ইরান কামনা করেনি।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের এই সরাসরি বার্তা দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা হলেও স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে। কারণ, ইরান ও কাতারের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে তেল-গ্যাস ক্ষেত্র এবং পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা ইস্যুতে এই দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া রয়েছে। ফলে এই হামলার ঘটনায় সম্পর্কের অবনতি হলেও তা স্থায়ী হবে না বলেই ধারণা করছেন মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা।
এদিকে কাতার সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের দুঃখপ্রকাশের বিষয়টি প্রচার করেনি। তবে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে টেলিফোনালাপের তথ্য মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। কাতারের পক্ষ থেকেও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে ইরান-আমেরিকা উত্তেজনা এবং ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। এই প্রেক্ষাপটে ইরানের পক্ষ থেকে কাতারকে সরাসরি দুঃখপ্রকাশ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়াকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।