ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা আরও সুসংগঠিত ও নিরপেক্ষ করতে নতুন নীতিমালা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ বুধবার নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. শরিফুল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, “আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিদেশি গণমাধ্যম নীতিমালা-২০২৫” নামে এই নতুন নির্দেশনা চালু হওয়ার ফলে ২০২৩ সালের পুরনো নীতিমালাটি বাতিল করা হয়েছে।
নতুন নীতিমালার আওতায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ইসি সচিব বরাবর ই-মেইল বা হার্ডকপিতে তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এই প্রতিবেদনগুলোতে প্রাক-নির্বাচন, ভোটগ্রহণের দিন এবং নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে নিরপেক্ষ তথ্য উপস্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণ চলাকালে যদি কোন অনিয়ম চোখে পড়ে, তবে তার সুপারিশসহ রিপোর্ট জমা দিতে পারবেন তারা।
নির্বাচনী পরিবেশকে অবাধ ও নিরপেক্ষ রাখার স্বার্থে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তারা যেন কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান না নেন, এমনকি তাদের কোনো কার্যক্রম বা মন্তব্য যেন পক্ষপাতিত্বের ইঙ্গিত না দেয়, সে দিকেও সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার সময় প্রতিটি সংস্থা কেবলমাত্র একজন প্রতিনিধিকে মনোনীত করতে পারবে। নির্বাচন চলাকালে তারা নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তা বা সংস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনী বিধিনিষেধ, নির্বাচন-সম্পর্কিত আইন ও সংবিধানের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। নির্বাচনকালীন সময়ে তাঁদের আচরণ এমন হতে হবে, যা নিরপেক্ষতার পরিচয় বহন করে এবং কোনো রাজনৈতিক পক্ষের পক্ষাবলম্বনের সম্ভাবনা থাকে না। কোনো রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ, গণমাধ্যমে প্রভাব সৃষ্টিকারী মন্তব্য কিংবা নির্বাচনী কাজে বিঘ্ন ঘটানো থেকেও তারা বিরত থাকবেন।
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি থাকবে, তবে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসার যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করবেন, তা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে এবং দীর্ঘসময় কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান করা যাবে না।
এছাড়া, পর্যবেক্ষক হওয়ার জন্য বিদেশি ব্যক্তি বা সংস্থাকে ইসির কাছে আবেদন করতে হবে এবং তাদের নির্বাচন, সুশাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার খাতে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ বিষয়ে ইসি ৩০ দিনের সময়সীমা দিয়ে আবেদন আহ্বান করবে।
বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের জন্যও নেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রস্তুতি। ভোটগ্রহণের ১০ দিন আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় একটি সহায়তা ডেস্ক স্থাপন করা হবে। কেউ যদি জেলা বা নির্বাচনী এলাকাগুলোতে পর্যবেক্ষণে যেতে চান, তাহলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসি সচিবালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানাবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদেরও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের অবহিত করবেন।
এই নতুন নীতিমালা শুধু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরই নয়, স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ আগামী জাতীয় নির্বাচনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।