সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের একটি সাক্ষাৎকার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ৫ই আগস্ট স্বৈরাচারী সরকার শেখ হাসিনার পতনের পরবর্তী পরিস্থিতি এবং সরকার গঠনের নেপথ্যের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। বিশেষত, জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্রন্টলাইনে থাকা এই তরুণ নেতা দেশ পরিচালনার জন্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও কৌশল তুলে ধরেছেন।
আসিফ মাহমুদ জানান, শেখ হাসিনার পতনের পর দেশকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল। যদিও তখন অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি যে, ৫ই আগস্টের মধ্যেই সরকারের পতন ঘটবে। এমনকি ব্যর্থতার পরিস্থিতিতে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের প্রস্তুতিও রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, “৫ তারিখ আমরা যদি সফল না হতাম, তাহলে অস্ত্র তুলে নেবার ঘোষণা দিতাম। নাহিদ ভাই ভিডিও বার্তা রেকর্ড রেখেছিলেন, আমিও কী ঘোষণা দেবো তা প্রস্তুত রেখেছিলাম।”
সরকার পতনের পরবর্তী সময়ে দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের বিষয়টি সামনে আসে। আসিফ মাহমুদ জানান, এটি কোনো সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ছিল না, তবে তিনি অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে এই পদে দেখার পক্ষে ছিলেন।
তিনি বলেন, “আমার মার্কিন দূতাবাসের কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক নেতা আশিক ভাই, মুশফিকুল ফজল আনসারি, আলী রিয়াজ, বদিউল আলম স্যারদের সঙ্গে কথোপকথন হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমি জানতে চেয়েছিলাম, ড. ইউনুসকে আহ্বান করলে তিনি আসবেন কিনা। তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করি এবং মইন চৌধুরির মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছাই। আমাদের পরিকল্পনা শোনার পর তিনি সম্মতি দেন।”
সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তবে সেনাবাহিনীর প্রধান ড. ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করার বিরোধিতা করেছিলেন।
সাক্ষাৎকারে আসিফ মাহমুদ বলেন, “৬ তারিখ তিন বাহিনীর প্রধান ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়, যা প্রায় চার ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। সেনাপ্রধান মূল আপত্তি তুলেছিলেন যে, ড. ইউনুসের নামে মামলা রয়েছে এবং তিনি একজন দণ্ডিত ব্যক্তি। তাই তাকে এই পদে আনা কতটা যৌক্তিক হবে, তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।”
তিনি আরও বলেন, “সেনাপ্রধান শেষ পর্যন্ত বলেছিলেন, ‘আমি বুকে পাথর চাপা দিয়ে এই সিদ্ধান্তটা মেনে নিচ্ছি।’”
সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিশেষত, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সামরিক বাহিনীর মতামত ও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ বিবেচনায় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছিল। আসিফ মাহমুদের বক্তব্যে অভ্যুত্থানের নেপথ্যের কৌশল ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জটিলতা স্পষ্ট হয়েছে, যা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা হতে পারে।