
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে চলমান বিক্ষোভ ও সহিংসতা নিয়ে ভারতের একাধিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম অতিরঞ্জিত, বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক খবর প্রকাশ করছে। এসব প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য, অসংগত দাবি এবং বাংলাদেশকে ‘ভারতবিরোধী সহিংসতার কেন্দ্র’ হিসেবে উপস্থাপনের অভিযোগ উঠেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি তাদের ওয়েবসাইটের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে দাবি করেছে, ‘ভারতবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে বাংলাদেশে এক হিন্দু ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।’ তবে বাংলাদেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন কোনো ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এনডিটিভির পৃথক প্রতিবেদনে শরীফ ওসমান হাদিকে ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ মানচিত্রের নেপথ্যের ভারতবিরোধী নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং দাবি করা হয়—‘উগ্রপন্থী জনতাকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার’। একই সঙ্গে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর বাস্তব পরিস্থিতির চেয়ে অনেক বড় করে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নয়াদিল্লিভিত্তিক আরেক সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস–এর বাংলা সংস্করণে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ধারাবাহিক উসকানিমূলক শিরোনাম প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—‘রাজশাহীতে ভারতীয় মিশন ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা’, ‘ময়মনসিংহে হিন্দু ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা’ এবং ‘চ্যালাদের তাণ্ডবের পর বাংলাদেশের সংবাদপত্র সম্পাদকদের সঙ্গে ইউনুসের কথা’—যার বেশ কয়েকটির তথ্য যাচাইযোগ্য নয় বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কলকাতা-ভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘ওসমান হাদির মৃত্যু, ফের অশান্তি বাংলাদেশে, ঢাকার সংবাদপত্র অফিসে ভাঙচুর ও আগুন।’ একই ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছে ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ভারতের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সেখানে দলের উত্তরাঞ্চলীয় সংগঠক সারজিস আলমের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়—‘হাদি ভাইয়ের খুনিদের ভারত ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশন বন্ধ থাকবে।’ যদিও সংশ্লিষ্ট বক্তব্যের পূর্ণ প্রেক্ষাপট ও সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
অন্যদিকে, ‘গণমাধ্যম ভবনে আগুন দেওয়ার পর বাংলাদেশি সাংবাদিকরা ভেঙে পড়েছেন’—এমন শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সামগ্রিক সাংবাদিক সমাজকে আতঙ্কগ্রস্ত দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভারতের হিন্দুপন্থি সংবাদপত্র দ্য হিন্দু হাদিকে ‘উগ্রপন্থী নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছে, তার মৃত্যুর পর ঢাকায় হাজার হাজার অনুসারী প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের অফিসে হামলা চালিয়েছে—যা বাংলাদেশি সূত্রগুলোর মতে একপাক্ষিক ও অতিরঞ্জিত বর্ণনা।


বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের কংগ্রেস দলের সংসদ সদস্য শশী থারুর। ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সংসদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততার আহ্বান জানিয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতীয়দের বিরুদ্ধে এবং যাদের ভারতপন্থী মনে করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বৈরিতা উসকে দেওয়া হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে বাংলাদেশে দুটি ভারতীয় ভিসা সেন্টার বন্ধ করতে হওয়াকে হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন থারুর।