জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম ছাত্র নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ তার এক ফেসবুক পোস্টে দেশের প্রথম সারির কিছু গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ তুলেছেন। গতকাল ৬ জুলাই রাত ১১টা ৩৮ মিনিটে প্রকাশিত পোস্টে তিনি লেখেন, স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পরেও কিছু কর্পোরেট মালিকানাধীন গণমাধ্যম তাদের ‘অপসাংবাদিকতা’ চালিয়ে যাচ্ছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের বর্তমান স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করা এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে অস্থিতিশীল করে তোলা। এই ‘অপসাংবাদিকতা’র পেছনে স্বৈরাচার হাসিনার সমর্থকরাই সক্রিয়, যারা ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার পোস্টে বলেন, হাসিনার শাসনামলে যখন রাষ্ট্র জনতার শত্রুতে পরিণত হয়েছিল, তখন বসুন্ধরা গ্রুপের মতো কিছু গণমাধ্যম কেবল নীরব ছিল না, বরং তারা সক্রিয়ভাবে হাসিনার তাবেদারি করেছে এবং ফ্যাসিবাদকে সহযোগিতা করেছে। এই গণমাধ্যমগুলো মিথ্যা প্রচার করেছে, প্রতিবাদী ছাত্রদের নামে কুৎসা রটিয়েছে এবং ভিডিও এডিট করে বাস্তবতা পাল্টে দিয়েছে। তারা এমন এক ভয়ংকর প্রোপাগান্ডা মেশিনকে সচল রেখেছিল, যে মেশিন ছাত্রদের গুলি করার এবং ভিন্নমতকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করার পক্ষে কাজ করেছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, সেই স্বৈরাচার পতনের দীর্ঘদিন পরেও এই গণমাধ্যমগুলো থামেনি। একই কায়দায় আবারও কলম ধরেছে, ক্যামেরা চালু করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির বিরুদ্ধে এবং তাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে যে কুৎসা রটানো শুরু হয়েছে, তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। হাসনাত আব্দুল্লাহর মতে, এটি একটি সুপরিচিত কৌশল, যার উদ্দেশ্য স্পষ্ট: যারা পরিবর্তন আনতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ছড়িয়ে কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষা করা। তিনি এই কার্যক্রমকে ‘সাংবাদিকতা নয়’, বরং একটি ‘ডার্ক অপারেশন’ বা ‘কালো অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, যা মিথ্যা আর বিভ্রান্তি ছড়িয়ে জনগণকে ঠকানোর চেষ্টা করছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও, হাসনাত আব্দুল্লাহ জোর দিয়ে বলেছেন যে সেই স্বাধীনতা মানে দায়িত্ব, সত্যের প্রতি দায় এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা। যখন বড় কর্পোরেট মিডিয়া ভুল তথ্য ছড়িয়ে জনমতকে বিষিয়ে তোলে এবং ‘অভিমত তৈরি’ করার চেষ্টা করে, তখন ক্ষতি কেবল একটি দলের হয় না, ক্ষতি হয় গোটা গণতন্ত্রের।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, গণঅভ্যুত্থান কেবল শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য ছিল না। এই অভ্যুত্থান ছিল সমস্ত স্বৈরতন্ত্র, সমস্ত ক্ষমতার অপব্যবহার, সমস্ত মিথ্যার কারখানার বিরুদ্ধে। তাদের অভ্যুত্থান ছিল সকল ধরনের কর্পোরেট মাফিয়া এবং ফ্যাসিবাদী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও।
হাসনাত আব্দুল্লাহ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তারা প্রতিটি মিথ্যা, প্রতিটি অপপ্রচার এবং সাংবাদিকতার নামে সংঘটিত প্রতিটি অন্যায় নথিভুক্ত করছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, যদি এই মিডিয়া হাউসগুলো সংবাদপত্র না হয়ে ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনার রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে থাকে, তাহলে তাদের অবশ্যই জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে। তার চূড়ান্ত বার্তা, “আপনারা জনগণের ঊর্ধ্বে নন। আর সত্যের ঊর্ধ্বে তো ননই। জীবন থাকতে বাংলার মাটিতে ফ্যাসিবাদের কোনো ধরনের পুনর্বাসনই আমরা হতে দেব না।”