নোটিশ:
শিরোনামঃ
সরাসরি ট্রেন চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ: লালমনিরহাটে আন্দোলন তীব্র উপদেষ্টাদের এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক ইরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত ৪০, আহত ১২০০, নেপথ্যে ইসরায়েল জাবিতে হামলার ঘটনায় ২৫৯ ছাত্রলীগ কর্মী বহিষ্কার, ৯ শিক্ষক বরখাস্ত আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন কৌশল: ‘মব’ সৃষ্টি করে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আধিপত্য আল-জাজিরাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানালেন, বাংলাদেশে ‘দ্বিতীয় ’স্বাধীনতার পর দেশ গঠনের দায়িত্বে আছেন আল-জাজিরায় ড. ইউনূস: শেখ হাসিনাকে থামাতে পারবেন না মোদি মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি যুবক নিহত ফ্রান্সে মসজিদে হামলা, নামাজরত মুসল্লিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা ঢাবি শিক্ষার্থীর লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে ক্লাসে যাওয়ার দাবিতে প্রতীকী অনশন

ট্রাম্পের আধিপত্যবাদী মনোভাব, গ্রিনল্যান্ড সাধারণ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫
  • ২১ বার দেখা হয়েছে
প্রেস ফটোগ্রাফাররা ১১ মার্চের সাধারণ নির্বাচনের আগে গ্রিনল্যান্ডের নুকে নির্বাচন বিতর্কের পর ইনুইট আতাগাতিগের মুটে বোরুপ এগেদেকে ধারণ করছেন। ছবি: রয়টার্স
প্রেস ফটোগ্রাফাররা ১১ মার্চের সাধারণ নির্বাচনের আগে গ্রিনল্যান্ডের নুকে নির্বাচন বিতর্কের পর ইনুইট আতাগাতিগের মুটে বোরুপ এগেদেকে ধারণ করছেন। ছবি: রয়টার্স

স্বাধীনতার প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এবং ট্রাম্পের দখলের হুমকির মধ্যে, গ্রিনল্যান্ডের জনগণ এক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে।

বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড মঙ্গলবার তার পরবর্তী সংসদ ও সরকার নির্বাচনের জন্য ভোট দেবে।

ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হওয়ায় সাধারণত এই ধরনের নির্বাচন শুধুমাত্র স্থানীয় পর্যায়েই গুরুত্ব পায়। তবে এবারের নির্বাচন একটি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে, কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খোলাখুলিভাবে এই দ্বীপটি অধিগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

গ্রিনল্যান্ড, যেটি প্রযুক্তিগতভাবে উত্তর আমেরিকার অংশ, মূল্যবান খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এবং এটি রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাঝামাঝি অবস্থিত। দ্বীপটিতে ইতোমধ্যে একটি মার্কিন ঘাঁটিও রয়েছে।

“আমি মনে করি, আমরা এটি পাব। যেকোনো উপায়ে আমরা এটি পাব,” গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসে ট্রাম্পের এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন গ্রিনল্যান্ডের নেতারা।

কে ভোট দিচ্ছে এবং কীভাবে নির্বাচন হচ্ছে?

প্রায় ৫৬,০০০ জনসংখ্যার গ্রিনল্যান্ডে প্রায় ৪১,০০০ নাগরিক ভোট দেওয়ার যোগ্য। তারা ৩১ সদস্যের সংসদ, ইনাটিসারসুয়াট (Inatsisartut) নির্বাচন করবে।

নির্বাচন প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়, অর্থাৎ প্রতিটি দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদীয় আসন বণ্টন করা হয়।

ভোটগ্রহণ সকাল ৯টায় (গ্রিনিচ মান সময় ১১:০০) শুরু হয়ে স্থানীয় সময় রাত ৮টায় (২২:০০ GMT) শেষ হবে। বিশাল ও দুর্গম ভূখণ্ড থাকা সত্ত্বেও, প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ ভোটার উপস্থিত থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন।

প্রধান রাজনৈতিক দল ও তাদের নীতি

একাধিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। যদিও অনেক দল অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত, তবে তারা গ্রিনল্যান্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।

  • ইনুইট আতাকাতিগিত (IA): বামপন্থী দল, যার নেতৃত্বে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুটে বোরূপ এগেদে রয়েছেন। দলটি গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে এবং ভবিষ্যতে গণভোটের কথা বললেও তা অবিলম্বে নয়।
  • সিউমুত (Siumut): অতীতের শাসক দল। এটি স্বাধীনতার পক্ষে থাকলেও ধীরগতির কৌশল গ্রহণের পক্ষে, যা মূলত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়।
  • নালেরাক (Naleraq): স্বাধীনতার পক্ষের একটি দল, যা গ্রিনল্যান্ডের সাংস্কৃতিক পরিচয় ও আত্মনির্ভরশীলতার উপর গুরুত্ব দেয়।
  • ডেমোক্রাতিট (Demokraatit): মধ্য-ডানপন্থী দল, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ওপর জোর দেয় এবং স্বাধীনতার পক্ষে থাকলেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেয়।
  • আতাসসুত (Atassut): উদারবাদী-রক্ষণশীল দল, যা ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে।

মূল ইস্যুসমূহ

১. স্বাধীনতা

স্বাধীনতা এই নির্বাচনের প্রধান ইস্যু। কিছু দল তাৎক্ষণিক স্বাধীনতা চাইলেও, অন্যরা ধাপে ধাপে তা অর্জনের পক্ষে।

ট্রাম্পের মন্তব্য, “গ্রিনল্যান্ড কেনা হলে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য ভালো হবে,” ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী এগেদে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “গ্রিনল্যান্ড আমাদের।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের মন্তব্য স্বাধীনতা সংক্রান্ত আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করেছে। কিছু বিশ্লেষক বলছেন, এটি ডেনমার্কের সঙ্গে গ্রিনল্যান্ডের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে, যেখানে অন্যরা মনে করছেন, এটি স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও তীব্র করেছে।

তবে চূড়ান্তভাবে, “স্বাধীনতার গণভোট আহ্বানের ক্ষমতা গ্রিনল্যান্ড সরকারের হাতে,” বলেছেন অধ্যাপক রিচার্ড পাওয়েল।

২. অর্থনৈতিক উন্নয়ন

গ্রিনল্যান্ডের অর্থনীতি মূলত মৎস্য খাত এবং ডেনমার্কের আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

কিছু দল বলছে, খনন, পর্যটন ও সম্পদ আহরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করা সম্ভব।

বিশ্বের ২৫% বিরল খনিজ উপাদান গ্রিনল্যান্ডে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়, যা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে পরিবেশগত ঝুঁকি এবং স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিরোধিতার কারণে খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে।

৩. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

এই নির্বাচন গ্রিনল্যান্ডের আন্তর্জাতিক কৌশল পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং আইসল্যান্ডের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংযোগ জোরদার করতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের ফলে গ্রিনল্যান্ড কত দ্রুত স্বাধীনতার দিকে এগোবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক বজায় রাখবে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

ডেনমার্ক কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করে?

গ্রিনল্যান্ড বর্তমানে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং এটি ২০০৯ সালে স্বায়ত্তশাসন লাভ করে, যা স্বাধীনতার জন্য গণভোটের অধিকার দেয়।

গ্রিনল্যান্ড নিজেই তার অভ্যন্তরীণ প্রশাসন পরিচালনা করে, তবে পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা ডেনমার্ক নিয়ন্ত্রণ করে।

ডেনমার্ক প্রতি বছর গ্রিনল্যান্ডকে প্রায় ৫৭০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়, যা দ্বীপটির মোট বাজেটের অর্ধেক এবং জিডিপির ২০%।

ট্রাম্প কেন গ্রিনল্যান্ডে আগ্রহী?

গ্রিনল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান ও খনিজ সম্পদের কারণে ট্রাম্প এতে আগ্রহী।

২০১৯ সালে, প্রথমবারের মতো তিনি দ্বীপটি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

গ্রিনল্যান্ড উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপের সংক্ষিপ্ততম পথ তৈরি করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত সুবিধা তৈরি করে। এটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি এবং ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কীকরণ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের মধ্যবর্তী জলসীমায় রাডার স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে, কারণ এটি রাশিয়া ও চীনের নৌপথের প্রবেশদ্বার।

তবে গ্রিনল্যান্ডের সংসদের সব রাজনৈতিক দল এবং ৮৫% জনগণ ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে।

বিশ্লেষক ভলকার্ডসেন বলেন, “কিছু রাজনৈতিক নেতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আগেভাগেই আলোচনার পক্ষে, অন্যরা মনে করেন এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।”

উপসংহার

গ্রিনল্যান্ডের এই নির্বাচন শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য নয়, বরং দ্বীপটির ভবিষ্যৎ অবস্থান নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাধীনতার প্রশ্নটি এখন কেবল “হবে কি হবে না” নয়, বরং “কখন এবং কীভাবে?” সেটিই মূল বিতর্কের বিষয়।

এই নির্বাচনের ফলে দ্বীপটির স্বাধীনতার গতি, অর্থনৈতিক নীতি ও আন্তর্জাতিক কৌশল কীভাবে গঠিত হবে, তা পরিস্কার হয়ে উঠবে।

সূত্র: আল জাজিরা

  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT