পশ্চিমা গণমাধ্যম যাঁকে “আল-কাসসামের ভূত” নামে আখ্যা দিয়েছে তাঁর নিঃশব্দ উপস্থিতি ও গোপন কার্যকলাপের জন্য, সেই ৫৫ বছর বয়সী ইজেদ্দিন আল-হাদ্দাদ এখন গাজায় হামাসের বাস্তবিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
প্রায় কোনো ছবি নেই তাঁর—একজন অভিজ্ঞ যোদ্ধা হিসেবে তিনি ইসরায়েলের একাধিক হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন। ২০২৫ সালের মে মাসে মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যার পর তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের শীর্ষ পদে আসেন।
“তিনি একজন কঠিন ও দৃঢ়চেতা যোদ্ধা… সম্মানিত ও ভালোবাসার পাত্র,” বলছিলেন ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইউসুফ আলহেলু।
সাত মাসে গাজায় হামাসের নেতৃত্ব পাওয়া এটি তৃতীয় পরিবর্তন, যেখানে গত ২১ মাসে ইসরায়েলি হামলায় ৫৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন—অধিকাংশই নারী ও শিশু।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের অনুপ্রবেশে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে জানা গেছে—যা ইসরায়েলিরা “ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরাজয়” হিসেবে উল্লেখ করে। এছাড়াও তিনি হামাসে নতুন সদস্য নিয়োগ দেন এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের তত্ত্বাবধান করেন।
আলহেলুর ভাষায়, “তিনি উত্তর গাজার অন্যতম পরিচিত কমান্ডার, এবং অত্যন্ত বুদ্ধিমান বলেই দ্রুত নতুন যোদ্ধা সংগ্রহ করতে পারেন।”
১৯৭০ সালে গাজা শহরে জন্মগ্রহণকারী আল-হাদ্দাদ ১৯৮৭ সালে নবগঠিত হামাসে যোগ দেন। প্রথমে কাসসাম ব্রিগেডের একজন পা-সেনা হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও তিনি দ্রুত প্লাটুন কমান্ডার, ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এবং পরে ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে উত্তরণ করেন।
তিনি হামাস কমান্ডারদের মধ্যে “একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগসূত্র” হিসেবে বিবেচিত। প্রাক্তন হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার (যিনি ২০২৪ সালের অক্টোবরে নিহত হন)-এর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, যা তাঁর প্রভাব আরও দৃঢ় করে তোলে।
হামাসের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা শাখা ‘আল-মাজদ’-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন, যেখানে তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করতেন।
“তাঁর সামরিক কৌশল পূর্ববর্তী নেতাদের চেয়ে আলাদা। তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বেও ব্যাপক প্রভাব রাখেন,” বলেন আলহেলু। হামাসের এই রাজনৈতিক শাখা গাজায় সরকার পরিচালনা, কূটনীতি ও জনসংযোগ নিয়ন্ত্রণ করে—২০০৭ সাল থেকে যেটির ক্ষমতায় রয়েছে হামাস।
২০০৮ সাল থেকে কমপক্ষে ছয়বার হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হওয়া এবং তাঁর মাথার ওপর ইসরায়েলি $৭৫০,০০০ পুরস্কার ঘোষণার পর, ইজেদ্দিন আল-হাদ্দাদ এখন ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান টার্গেট।
পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের দাবি, আল-হাদ্দাদ তাঁর পূর্বসূরি সিনওয়ার ভাইদের তুলনায় তুলনামূলক বাস্তববাদী। তিনি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বন্দি বিনিময়ের জন্য চাপ দিয়েছিলেন এবং যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে আরও বন্দি মুক্তির চেষ্টা করেছিলেন, যদিও মার্চে সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়।
বর্তমানে তিনি যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের আলোচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তদানের ক্ষমতা রাখেন। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইসরায়েলকে পুরোপুরি গাজা থেকে সরে যেতে হবে এবং যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে—এর আগে তিনি অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেবেন না।
পশ্চিমা রিপোর্টে আরব গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, আল-হাদ্দাদ হামাসের নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছেন, যা তাঁর পূর্বসূরিদের অবস্থান থেকে একটি বড় পরিবর্তন।
তবে হাওয়াশ এই ব্যাখ্যাকে সন্দেহের চোখে দেখেন। তাঁর মতে, হামাসের কোনো নেতাই গাজার যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে মূলনীতি থেকে সরে আসতে প্রস্তুত নন।
তিনি বলেন, “আল-হাদ্দাদ এমন একটি সমঝোতার পক্ষে, যা ইসরায়েলি আগ্রাসনের অবসান ঘটাবে, অধিক সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্ত করবে এবং গাজা পুনর্গঠনের পথ সুগম করবে। এসব লক্ষ্য তো হামাসের যেকোনো নেতারই থাকবে। আমি তাঁর অবস্থানে বড় কোনো পার্থক্য দেখি না।”