বুধবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর ট্যাংক, ড্রোন ও যুদ্ধবিমানের তাণ্ডবে কমপক্ষে ৯২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন খাদ্য সহায়তা নিতে আসা অন্তত ১৬ জন সাধারণ মানুষ এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্র চার্জ করতে গিয়ে ড্রোন হামলার শিকার হওয়া শরণার্থী শিবিরের অন্তত ১৩ জন বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার ভোরে গাজা সিটি ও উত্তরের এলাকাগুলোতে নিহত হন অন্তত ৬৪ জন। এর পাশাপাশি, দক্ষিণ ও উত্তর গাজাকে বিভক্তকারী নেতজারিম করিডর সংলগ্ন একটি সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রের সামনে খাদ্য সংগ্রহের জন্য অপেক্ষারত ১৬ জন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাসাম আবু শার AFP-কে জানান,
“রাত ১টার দিকে, হঠাৎ গুলি ছোড়া শুরু হয়। ট্যাংক, ড্রোন ও বিমান একসাথে হামলা চালায়। এত মানুষ ছিল যে কেউ পালাতে পারেনি, কাউকে সাহায্যও করা যায়নি।”
প্রতিদিনই শত শত মানুষ এই করিডরে জড়ো হন Gaza Humanitarian Foundation (GHF)-এর খাদ্য সহায়তা নিতে, যেটি পরিচালিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সহায়তায়। তবে এই সহায়তাকে জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই “সহায়তার অস্ত্রীকরণ” বলে নিন্দা করেছে।
আল জাজিরা-এর আরেক প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম বলেন,
“তিন মাস ধরে সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ। খাদ্য, ওষুধ, পানি কিছুই নেই। এখন মানুষ বাধ্য হয়ে সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে যাচ্ছে, কিন্তু সেগুলোই যেন মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে উঠেছে।”
বিতরণ করা খাদ্যপণ্যের পুষ্টিগুণও খুবই নিম্নমানের বলে জানান স্থানীয় পুষ্টিবিদরা। তারেক বলেন, “একটি প্যাকেটে সামান্য আটা, এক বোতল পানি আর এমন কিছু খাবার দেওয়া হচ্ছে, যা এক ব্যক্তির একদিনও চলে না।”
একইদিন গাজার উপকূলবর্তী আল শাতি শরণার্থী শিবিরে একটি অস্থায়ী চার্জিং স্টেশনে ড্রোন হামলায় প্রাণ হারান আরও ১৩ জন।
আল জাজিরা প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানান,
“এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজায় বিদ্যুৎ নেই। তাই মানুষ মোবাইল ও অন্যান্য যন্ত্র চার্জ করতে শরণার্থী শিবিরে নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো হন। সেই স্থানেই হামলা চালানো হয়েছে।”
Reuters জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে “সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা” তাদের দিকে এগিয়ে আসছিল, ফলে “সতর্কতামূলক গুলি” চালানো হয়।
তবে তারা কোনো মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে।
চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৯টি মৃতদেহ ও ২২১ জন আহত ব্যক্তি ভর্তি হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-এর তথ্য অনুযায়ী মোট ৫৫,৭০৬ জন নিহত এবং ১,৩০,১০১ জন আহত হয়েছেন।
সূত্র: AFP, Al Jazeera, Reuters, Gaza Health Ministry (২০ জুন)