যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর গ্যারি পিটার্স (ডি-এমআই) মঙ্গলবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
সিনেটর পিটার্স অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, প্রধান কমিশনগুলোর প্রতিবেদন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, রাজনৈতিক দলগুলো কম সংস্কার মেনে নিলে সরকার ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজন করবে। তবে, যদি দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে বৃহত্তর সংস্কার প্যাকেজ চায়, তবে সাধারণ নির্বাচন কয়েক মাস পরে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, “নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। এটি উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের দিন বড় ধরনের উদযাপন হবে, যেমনটি আমরা অতীতে দেখেছি।”
অধ্যাপক ইউনুস আরও বলেন, প্রধান কমিশনগুলোর প্রস্তাবিত সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে তারা জুলাই চার্টারে স্বাক্ষর করবে। “জুলাই চার্টারই দেশের ভবিষ্যৎ পথরেখা নির্ধারণ করবে,” তিনি বলেন।
পিটার্স সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রশংসা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রত্যাশায় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরসহ তার নির্বাচনী এলাকায় অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাস করেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে বিপুল পরিমাণ ভ্রান্ত তথ্যও ছড়িয়েছে। এর কিছু অংশ যুক্তরাষ্ট্রেও পৌঁছেছে, যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
অধ্যাপক ইউনুস প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষার প্রতি তার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন, তা তাদের বর্ণ, ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ বা লিঙ্গপরিচয় যাই হোক না কেন।
তিনি বলেন, গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘুদের ওপর হওয়া হামলাগুলো ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। তবে তার সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন সিনেটরকে বাংলাদেশে শহর ও নগর পরিদর্শনের আহ্বান জানান এবং প্রকৃত ধর্মীয় সম্প্রীতির চিত্র জানতে অন্যান্য মার্কিন রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও কর্মীদের দেশ ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের সহায়তা দরকার। দয়া করে আপনার বন্ধুদের বাংলাদেশ ভ্রমণের কথা বলুন। এভাবেই আমরা এসব ভ্রান্ত তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব।”
দুই নেতা সামাজিক ব্যবসা, দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আলোচনা করেন — শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বব্যাপী।
সূত্র: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ