আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন ব্যবহারের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা প্রায়ই ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের কারণ হচ্ছে, নতুন এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ড্রোন ব্যবহার করছে, তবে এই ড্রোন হামলাগুলো বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ড্রোন ওয়ারস ইউকে নামক সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নভেম্বর ২০২১ থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত অন্তত ৫০টি হামলায় ৯৪৩ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
“ডেথ অন ডেলিভারি” শিরোনামের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড্রোন হামলাগুলো প্রায়ই বেসামরিক জনগণ ও যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃত প্রাণহানির সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ অনেক দেশ গোপনে ড্রোন অভিযান পরিচালনা করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ মাঝারি উচ্চতা ও দীর্ঘস্থায়ী (MALE) ড্রোন সংগ্রহের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।
২০২২ সাল থেকে কমপক্ষে ১০টি আফ্রিকান দেশ এই অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। সরকারগুলো এই ক্রয়ের কারণ হিসেবে বিদ্রোহ ও নিরাপত্তা হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের যুক্তি দেখিয়েছে।
তবে বাস্তবতা ভিন্ন। অনেক ড্রোন হামলায় বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
প্রতিবেদনের লেখক কোরা মরিস বলেন, ড্রোনকে আধুনিক ও কার্যকর যুদ্ধের একটি উপায় হিসেবে প্রচার করা হয়েছে, যেখানে সেনাদের জন্য ঝুঁকি কম।
তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ড্রোনের ব্যবহার সেনাবাহিনীর জন্য আক্রমণ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাত্রা আরও কমিয়ে দিয়েছে, ফলে সহজেই হামলা চালানো হচ্ছে এবং এতে বেসামরিক প্রাণহানি বাড়ছে।
ড্রোন ক্রয়ের পেছনে আফ্রিকার দেশগুলোর সামরিক আত্মনির্ভরশীলতার চেষ্টা এবং নতুন সরবরাহকারীদের দিকে ঝোঁকার প্রবণতা রয়েছে।
লন্ডনের রয়্যাল হোলোওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান মাইকেল স্পাগাট বলেন, এটি মূলত অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী সমাধান হওয়ার কারণে জনপ্রিয় হয়েছে।
তিনি বলেন, “ড্রোন কেনা মানে কম খরচে শক্তিশালী অস্ত্রশস্ত্র অর্জন করা। এতে হামলাকারীদের পাইলট নিহত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে না।”
প্রতিবেদনে ছয়টি দেশ চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে ড্রোন হামলায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে—
প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি বড় হামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে—
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বেসামরিক হতাহতের বিষয়ে প্রকৃত তদন্তের অভাব রয়েছে।”
গত ১০ বছরে ড্রোন পরিচালনাকারী দেশের সংখ্যা ৪ থেকে ৪৮ এ পৌঁছেছে।
বর্তমানে তিনটি আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ড্রোন রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও এগুলো “অত্যন্ত দুর্বল”।
কোরা মরিস ও মাইকেল স্পাগাট মনে করেন, ড্রোনের ব্যবহার আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে এবং ভবিষ্যতে অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠীগুলোর কাছেও শক্তিশালী ড্রোন পৌঁছে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী ড্রোনের প্রসার রোধ করতে এখনই আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রণয়ন করা জরুরি।
সূত্র: আল জাজিরা