ভূমধ্যসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাসে ইসরায়েলি নাগরিকদের ব্যাপক হারে জমি ক্রয়ের ঘটনা দেশটির রাজনৈতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। প্রধান বিরোধী দল আকেল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এই প্রবণতা সাইপ্রাসের নিজস্ব ভূমি সুরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলছে, বিশেষ করে লার্নাকা ও লিমাসোলে ‘গেটেড কমিউনিটি’ বা সুরক্ষিত বসতি স্থাপন ঘিরে।
আকেল দল এই প্রথমবারের মতো একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসরায়েলি নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট ভূমি লেনদেন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তারা ‘গোল্ডেন ভিসা’ (যে ভিসার মাধ্যমে বিনিয়োগের বিনিময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়) এবং অন্যান্য বিকল্প প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূসম্পত্তি ক্রয়ের লাগাম টানতে সংসদে দুটি বিলও পেশ করেছে।
আকেল নেতা স্টেফান স্টেফানউ সাইবিসি রেডিওকে বলেছেন, “সাইপ্রাস ছোট দেশ এবং একটি অস্থির অঞ্চলে অবস্থিত…আমাদের পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করতে হবে, তবে সরকারেরও এগিয়ে যেতে হবে।” তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্মাণ ব্যবসার জোয়ারের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের দ্বারা ব্যাপক হারে জমি কেনার ঘটনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার অভিযোগ, এই সম্পত্তিগুলো প্রায়শই সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর কাছাকাছি সংবেদনশীল ভৌগোলিক এলাকায় অবস্থিত।
স্টেফানউ বিশেষভাবে ইসরায়েলি নাগরিকদের ভূমি ক্রয়ের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে লিমাসোল এবং লার্নাকায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জমি ক্রয়ের মাত্রা বেড়েছে… নির্দিষ্ট এলাকাগুলো ব্যাপক হারে কেনা হচ্ছে, যেখানে ইসরায়েলি নাগরিক ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ প্রায় অসম্ভব, এমন সব বন্ধ এলাকা (গেটেড কমিউনিটি) তৈরি করা হচ্ছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “জায়নবাদী স্কুল তৈরি হচ্ছে – তারা সেগুলোকে এ নামেই ডাকে – সিনাগগ তৈরি হচ্ছে, এবং আপনারা বুঝতেই পারছেন যে, ইসরায়েলের নিজস্ব কিছু গুরুতর সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ইসরায়েল সাইপ্রাসে একটি ‘পেছনের উঠোন’ তৈরি করছে – এটি আমাদের জন্য বিপদের ঘণ্টা বাজাতে বাধ্য।”
আকেল নেতার মতে, স্থানীয় মানুষজন এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হলেও কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করছে। তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, “আমাদের ভূমি রক্ষা করুন, এবং নিশ্চিত করুন যে সাইপ্রাস চিরতরে সাইপ্রিয়টদেরই থাকবে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি আমরা এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিই, তাহলে একসময় আমরা আবিষ্কার করব যে আমাদের নিজস্ব ভূমি আর আমাদের নেই।”
স্টেফানউ আরও উল্লেখ করেন যে, স্পেন, ইতালি এবং জার্মানির মতো অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো ইতিমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তার কথায়, “এর বিপরীতে, আমরা সাইপ্রাসে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকি, এমনকি আমরা ‘গোল্ডেন ভিসা’ এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ধরনের ভূমি ক্রয়কে সহজ করি।” তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এটি কোনো বিদেশিবিরোধী বা ইহুদি-বিদ্বেষী মনোভাব থেকে বলা হচ্ছে না, বরং সাইপ্রাস যেন চিরতরে সাইপ্রিয়টদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত বিদেশিদের দ্বারা ভূসম্পত্তি কেনার যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তাতে লার্নাকায় ইসরায়েলি নাগরিকরা চতুর্থ বৃহত্তম ক্রেতা। এই সময়ে তারা ১,৪০৬টি সম্পত্তি কিনেছে, যার মধ্যে ৪৮১টির মালিকানার দলিল তাদের হাতে এসেছে। লিমাসোল ও পাফোসেও ইসরায়েলিরা চতুর্থ বৃহত্তম ক্রেতা হিসেবে রয়েছে। তবে, প্রতিটি জেলায় সাইপ্রিয়ট নাগরিকরাই ক্রেতাদের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন।
এই পুরো বিষয়টি সাইপ্রাসের ভবিষ্যৎ পরিচয়, জমির সুরক্ষা এবং সার্বভৌমত্ব নিয়ে একটি জাতীয় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সূত্র: সাইপ্রাস মেইল