সবাই ভাবে, মাঠের লড়াই তো মানুষদেরই জায়গা। কিন্তু চীনের বেইজিংয়ে ঘটল ভিন্ন ঘটনা। ফুটবল মাঠে নেমে পড়ল হিউম্যানয়েড রোবটরা। শনিবার সেখানে আয়োজন করা হয় অভিনব এক ফুটবল ম্যাচের। যেখানে চারটি রোবট দল মুখোমুখি হয় একে অপরের। এই তিন-জনের দলে তিন-জনের খেলা সম্পূর্ণ পরিচালিত হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মাধ্যমে।
মাঠের ঘাস ছিল কৃত্রিম, আর খেলোয়াড় ছিল রোবট। এএআইয়ের সাহায্যে পরিচালিত এসব হিউম্যানয়েড রোবট কখনও বলের পেছনে দৌড়াচ্ছে, কখনও আবার পড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়ানোর লড়াই চালাচ্ছে। এমনকি কেউ কেউ মাঠেই পড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়াতে না পারায় স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, এদের হুমড়ি খাওয়ার দৃশ্য দেখে দর্শকরা দারুণ আনন্দ পেয়েছেন।
খেলাটি উপভোগ করুন সাবাসা বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেইজে।
এই আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা ছিল বুস্টার রোবোটিক্স। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা চেং হাও বলেন, “খেলার মাঠ হলো রোবটের দক্ষতা পরীক্ষার সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। ভবিষ্যতে আমরা রোবট আর মানুষের মধ্যে ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করতে পারব। তবে তার আগে নিশ্চিত করতে হবে, রোবটগুলো যেন পুরোপুরি নিরাপদ থাকে।”
এদিকে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবট লার্নিং অ্যান্ড অটোনমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুব্রমানিয়ান রামামূর্তি বলেন, “রোবোটিক্সে প্রতিবছর যেভাবে উন্নতি হচ্ছে, তাতে এসব রোবটের খেলা সত্যিই প্রশংসনীয়।”
মোট চারটি বিশ্ববিদ্যালয় দল তাদের নিজেদের এআই অ্যালগরিদম দিয়ে রোবটগুলোকে প্রস্তুত করে। ফাইনাল ম্যাচে থিংহুয়া ইউনিভার্সিটির টিএইচইউ রোবোটিক্স দল ৫-৩ গোলে চীনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাউন্টেন সি দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। দর্শকরা দুই দলকেই প্রশংসায় ভাসান। একজন থিংহুয়া সমর্থক বলেন, “টিএইচইউ অসাধারণ খেলেছে। তবে মাউন্টেন সিও দারুণ লড়াই করেছে। ওদের কাছ থেকেও অনেক চমক ছিল।”
চীনের পুরুষ ফুটবল দল গত কয়েক বছর ধরে তেমন আলোড়ন তুলতে না পারলেও, হিউম্যানয়েড রোবট ফুটবল দলগুলো ঠিকই প্রযুক্তিপ্রেমী দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে। পুরো খেলা ছিল এআইয়ের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়। কোনো মানব নির্দেশনা ছাড়াই নিজেদের অ্যালগরিদমে বল খুঁজে মাঠের মধ্যে ছুটে বেড়িয়েছে রোবটরা।
এদের চোখের মতো উন্নত ভিজ্যুয়াল সেন্সর থাকায় বল ও খেলোয়াড় চিনে নিতে সক্ষম ছিল। আর পড়ে গেলে নিজে নিজে ওঠার মতো ব্যবস্থাও ছিল। যদিও অনেক সময় সেটি ঠিকঠাক না হওয়ায় মাঠের কর্মীরা স্ট্রেচারে তুলতে বাধ্য হয়েছেন।
এই অভিনব আয়োজন ছিল আসন্ন ওয়ার্ল্ড হিউম্যানয়েড রোবট গেমসের প্রস্তুতির অংশ। আয়োজকরা বলছেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের রোবট ফুটবল ম্যাচ আরও বড় পরিসরে আয়োজন করা হবে।