বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও প্রতারণার অভিযোগে আলোচিত বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান লায়ন এম কে খায়রুল বাশার বাহারকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রোববার ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের একটি বিশেষ দল রাজধানী থেকে তাকে আটক করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের এসএস মোহাম্মদ বাসির উদ্দীন। তিনি জানান, খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল।
বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে এক সময় অভিযোগ উঠেছিল বিদেশে উচ্চশিক্ষার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার। এরপর সিআইডি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করলে বেরিয়ে আসে আরও ভয়াবহ তথ্য। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, খায়রুল বাশার বাহারের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি মৌজায় ১ হাজার ১০৬ শতাংশ জমি রয়েছে। এসব জমির দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ১০২ কোটি টাকার বেশি। তবে জমির বাজারমূল্য অন্তত ৬০০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন জমি বিশেষজ্ঞরা। শুধু তাই নয়, রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বারিধারা ও অন্যান্য স্থানে বিএসবি গ্লোবাল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অসংখ্য ফ্ল্যাট, ভবন ও প্লটের খোঁজ পেয়েছে সিআইডি।
সিআইডির তদন্তে আরও বেরিয়ে আসে, প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া অফার লেটার, বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন এবং ভিজিট ভিসার লোভনীয় আশ্বাস দেখিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করত। অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর মিথ্যা আশ্বাসে প্রতারিত হয়েছেন প্রায় ৫ শতাধিক ভুক্তভোগী। প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া এই শত কোটি টাকা বিদেশে পাঠানো হয়নি, বরং দেশে নানা স্থাবর সম্পত্তি কেনায় ব্যবহার করেছে তারা।
অভিযোগ রয়েছে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি পরিশোধের নাম করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হলেও, শিক্ষার্থীদের নামে কোথাও কোনো টাকা জমা দেওয়া হয়নি। বরং এসব অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রেখে চেকের মাধ্যমে স্থানান্তর করতেন খায়রুল বাশার ও তার পরিবার। ভুক্তভোগীরা অর্থ ফেরত চাইলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কখনও শিক্ষার্থীর, কখনও অভিভাবকের নামে চেক দেওয়া হতো। কিন্তু সেই চেকগুলো বাউন্স হয়ে যায়। ফলে অনেকেই নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যাক্ট-এ মামলা করতে বাধ্য হন।
অবশেষে গত ৪ মে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে খায়রুল বাশার, তার স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন ও ছেলে আরশ ইবনে বাশারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সিআইডি। এ মামলায় আরও অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিএসবি গ্লোবাল শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখিয়ে ভুয়া অফার লেটার ও প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা হলো।