ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটেছে এক মানবিক ঘটনা। মোহাম্মদ ইব্রাহিম (৬০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যুর পর, তার পরিবারের কেউ মরদেহ নিতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’ এগিয়ে আসে। তারা ধর্মীয় নিয়ম মেনে বৃদ্ধ ইব্রাহিমের জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করে।
ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (১ জুলাই)। তার আগের দিন সোমবার (৩০ জুন) সকাল ১০টার দিকে মোহাম্মদ ইব্রাহিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালে ঢোকার পরপরই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত চিকিৎসকরা এগিয়ে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ পরে মৃত ব্যক্তির মোবাইল ফোন থেকে নম্বর নিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করে। জানা যায়, ইব্রাহিমের জীবনের গল্পটা খুব বিচিত্র। ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামের হালিশহর ফইল্লাতলি বাজার এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন এক হিন্দু পরিবারে। পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘মোহাম্মদ ইব্রাহিম’।
তার জীবন ছিল ছন্নছাড়া। জীবিকার খোঁজে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন দিনাজপুরের ‘মাদরাসাতুল মদিনা’ ও ‘জামায়াতুল মদিনায়’ বাবুর্চির কাজ করতেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মহিষকার এলাকায় বিয়ে করেন। তাদের সংসারে একটি ছেলে রয়েছে, নাম ইসরাফিল সিয়াম। তবে সংসারও টেকেনি। স্ত্রী তাহমিনা ইব্রাহিমকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করেন। সেই থেকে তিনি প্রায় নিঃসঙ্গ।
চলতি বছরের ৫ মে শ্বশুরবাড়িতে আসেন। সেখান থেকে একাই হাসপাতাল যান। মৃত্যুর পর পুলিশ তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু ছেলেও বাবার মরদেহ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে অবাক পুলিশ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানায় ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’কে।
সংগঠনটির সদস্যরা মঙ্গলবার বিকেলে যথাযথ ধর্মীয় রীতি মেনে ইব্রাহিমের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোজাফফর হোসেন বলেন, “ইব্রাহিমের পরিবার মরদেহ নিতে রাজি না হওয়ায় আমরা বাতিঘরকে জানাই। তারা খুবই মানবিকভাবে দাফনের দায়িত্ব নেয়। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়।”
‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. আজহার উদ্দিন বলেন, “সমাজের অবহেলিত, নামহীন বা পরিবারবিচ্ছিন্ন মানুষদের মর্যাদার সঙ্গে দাফনের দায়িত্ব আমরা নিঃস্বার্থভাবে পালন করি। যেন কেউ মৃত্যুর পর অবহেলার শিকার না হন। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।”