একসময় আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যৌথভাবে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বর্তমানে দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে দল দুটির মধ্যে মতানৈক্য বাড়তে থাকে, যা এখন সংঘর্ষের রূপ নিচ্ছে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। দল দুটির মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা মূলত জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নিয়োগ ও প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিরোধ থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
সংঘাতের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে বিএনপি ও জামায়াত। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও মাঠপর্যায়ে বিরোধ নিয়ন্ত্রণ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মন্তব্য করেছেন, জামায়াত কখন কী করবে, তা অনুমান করা কঠিন। তিনি বলেন, জামায়াত অতীতে বিএনপির সঙ্গে থাকলেও বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গেও জোট গড়েছে। তবে বিএনপি জামায়াতকে প্রতিপক্ষ মনে করে না এবং ভবিষ্যতে দূরত্ব কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, যা বিব্রতকর। তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াত রহস্যজনক আচরণ করছে এবং বিরূপ বক্তব্য দিয়ে বিভেদ তৈরি করছে।
অন্যদিকে, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর কারণেই সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি দুই দলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সূত্র জানায়, সর্বশেষ পাবনার সুজানগরে জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপির হামলার ঘটনায় দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। এমনকি অভিযুক্ত চার নেতাকে শোকজও করা হয়েছে।
এ ছাড়া ভোলায় জামায়াতের একটি কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
দ্বন্দ্বের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দল দুটির ভিন্ন অবস্থান। জামায়াত প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচন চায়, যেখানে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে। এছাড়া বিভিন্ন নিয়োগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মাদরাসার কমিটি নিয়ন্ত্রণ নিয়েও দ্বন্দ্ব বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, জামায়াত কৌশলী পথে এগোচ্ছে, যেখানে বিএনপি পিছিয়ে পড়ছে। তিনি মনে করেন, বিএনপির চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিতর্ক বাড়লেও জামায়াত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
এখন দেখার বিষয়, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে চলমান এই দূরত্ব সাময়িক নাকি দীর্ঘমেয়াদি কোনো বিভক্তির ইঙ্গিত বহন করছে।