বাংলাদেশ ফুটবল ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচিত হচ্ছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের (ইপিএল) অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী এবার লাল-সবুজের জার্সিতে মাঠে নামতে যাচ্ছেন। তার অন্তর্ভুক্তির ফলে বাংলাদেশ দল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান স্কোয়াডে পরিণত হয়েছে। আগামী ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে তার অভিষেকের সম্ভাবনা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক ফুটবলের দলবদল সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ‘ট্রান্সফারমার্কেট’-এর তথ্য অনুসারে, হামজার বর্তমান বাজারমূল্য ৪.৫০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৭০ কোটি টাকা)। তার অন্তর্ভুক্তির আগে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সম্মিলিত বাজারমূল্য ছিল ৪.০৯ মিলিয়ন ইউরো, যা এখন বেড়ে হয়েছে ৮.৫৯ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা)। ফলে, বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান ফুটবল দল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। আগে এই স্থানটি ছিল ভারতের দখলে। ভারতের স্কোয়াডের মূল্যমান বর্তমানে ৫.৮৮ মিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশের নতুন অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
হামজা চৌধুরী ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় লিগে খেলা প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার। তিনি লেস্টার সিটির একাডেমি থেকে উঠে আসেন এবং ২০১৭ সালে ক্লাবের মূল দলে অভিষেক করেন। প্রিমিয়ার লিগের পাশাপাশি তিনি ইউরোপা লিগ ও এফএ কাপের মতো প্রতিযোগিতায় লেস্টার সিটির হয়ে খেলেছেন। ২০২১ সালে লেস্টার সিটির হয়ে এফএ কাপ জয়েরও স্বাদ পান তিনি।
বর্তমানে তিনি চ্যাম্পিয়নশিপ ক্লাব ওয়াটফোর্ডের হয়ে খেলছেন। মিডফিল্ডে তার শক্তিশালী ট্যাকল, বল কন্ট্রোল এবং ম্যাচ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাংলাদেশ দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তার অভিজ্ঞতা ও পেশাদারিত্ব তরুণ ফুটবলারদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও মালদ্বীপ ফুটবলে আধিপত্য দেখিয়ে আসছে, তবে বাংলাদেশ এবার নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এশিয়ার সর্বোচ্চ মূল্যমানের ফুটবল দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বর্তমানে ১৯তম স্থানে রয়েছে। এই তালিকায় শীর্ষ তিন দল হলো—
বাংলাদেশের ফুটবলে পেশাদারিত্বের উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্তির ফলে ভবিষ্যতে এশিয়ার সেরা দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ২৫ মার্চের ম্যাচের জন্য, যেখানে ভারতের বিপক্ষে তার অভিষেক হতে পারে। অনেকের মতে, এটি হবে বাংলাদেশের ফুটবলে এক নতুন যুগের সূচনা।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কর্মকর্তারা মনে করছেন, হামজার অন্তর্ভুক্তি দলকে কেবল শক্তিশালীই করবে না, বরং আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের জন্য এটি বড় এক অনুপ্রেরণা হতে পারে।
হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। তার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার জাতীয় দলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান দল হিসেবে বাংলাদেশের এই নতুন অবস্থান শুধুমাত্র আর্থিক মূল্যমানের দিক থেকে নয়, বরং প্রতিযোগিতার ময়দানেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
ভবিষ্যতে, হামজার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল কেমন পারফর্ম করে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। কিন্তু একথা নিশ্চিত যে, তার অন্তর্ভুক্তির ফলে বাংলাদেশের ফুটবলে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।