ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগ্রাম শহরে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার ছয় মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করেছে পুলিশ—এমন গুরুতর অভিযোগ তুলেছে তাদের পরিবার। পরিবারের দাবি, শুধু আটক নয়, পুলিশ তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতনও চালিয়েছে। এই ছয়জনই গুরুগ্রামে প্রায় সাত-আট বছর ধরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। মালদার চাঁচল ১ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা এই শ্রমিকদের পরিচয়পত্র যাচাইয়ের কথা বলে সাদা পোশাকে পুলিশ তাদের বাড়িতে এসে তুলে নিয়ে যায় বলে জানান আটক ব্যক্তিদের এক আত্মীয় মামনি খাতুন।
তার ভাষ্যে, “সেদিন রাতে আমার দুই মামা আর দুই ভাইসহ মোট ছয়জনকে সাদা পোশাকের পুলিশ আমাদের ঘরে হানা দিয়ে আধার কার্ড দেখতে চায়। এরপর বলে থানায় নিয়ে যাবে আঙুলের ছাপ নিতে, কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেড়ে দেবে। কিন্তু এরপর থেকে আর তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।”
পরিবারের অভিযোগ, আটকের পর তাদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে মালদা জেলার যুগ্ম শ্রম কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগও জমা পড়েছে। যদিও গুরুগ্রাম পুলিশ বিবিসিকে ছয়জনকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করেছে, তবে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এই ঘটনাটি সামনে এসেছে এমন এক দিনে, যেদিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কলকাতায় এক বক্তব্যে অভিযোগ করেন, ভারতের একাধিক রাজ্যে বাংলাভাষী নাগরিকদের উপর নিপীড়ন চলছে। তিনি বলেন, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও ওড়িশায় বাংলাভাষীদের অবৈধ বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে, অথচ এদের অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গের বৈধ বাসিন্দা।
সম্প্রতি আরও কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে, ভারতীয় কিছু নাগরিককে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে জোর করে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে। পরে তাদের পরিচয় যাচাই করে ফের ভারতে পাঠানো হয়। এমন বাস্তবতায় গুরুগ্রামের এই ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রা নিচ্ছে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।