আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আরও জোরদার করছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে কমিশন। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার আমাদের জন্য বড় হুমকি হতে পারে। এজন্য আমরা কানাডার অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছি। কারণ গত বছর কানাডাতেও নির্বাচনের সময় ডিজিটাল মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। আমরা তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ নিয়ে নিজেরা প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সহজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য, বিভ্রান্তিকর ভিডিও এবং মনগড়া প্রচারণা চালানো যায়। এআই প্রযুক্তির ডিপফেক ভিডিও বা অডিও তৈরি করে কোনো প্রার্থী বা দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো সম্ভব। এতে জনমত বিভ্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, ভুয়া পোস্ট, সংবাদ বা মতামত প্রচার করে নির্দিষ্ট দলের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও তৈরি করা যায়।
বিশ্বের বহু দেশে ইতিমধ্যেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কানাডায় সম্প্রতি এক নির্বাচনে দেখা গেছে, এআই তৈরি করা ভুয়া ভিডিও ভাইরাল হয়ে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল। এতে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছিল। সে অভিজ্ঞতা থেকেই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
এবারের নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্ত জানালেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনকে যারা গ্রহণযোগ্য বলেছেন, তাদের আর আমন্ত্রণ জানানো হবে না। আমরা কেবল সেইসব পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানাব, যারা নির্ভরযোগ্য, অভিজ্ঞ এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বাস্তব অভিজ্ঞতা রাখেন। এবার আমরা নিরপেক্ষ এবং পেশাদার পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন মাঠে দেখতে চাই।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগের তুলনায় এবার আরও বেশি বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচনে আসবেন এবং ভোটের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করবেন।
সিইসি আরও জানান, ‘কমিশন ইতিমধ্যেই সারা দেশে ব্যাপক সচেতনতা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ভোটারদের পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রের কর্মী, পর্যবেক্ষক ও পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। যাতে কেউ কোনো ধরনের অনিয়ম বা ডিজিটাল অপপ্রচার চালাতে না পারে।’
এছাড়া তিনি জানান, কানাডা বাংলাদেশের এই উদ্যোগের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। সিইসি বলেন, ‘তারা বলেছে, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব এবং বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চাই।’
বৈঠকে কানাডার কূটনীতিকরা জানতে চেয়েছিলেন, জাতীয় নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে কিনা। এ প্রশ্নের উত্তরে সিইসি নাসির উদ্দিন জানান, ‘এখনো কোনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি। সময় এলেই কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে।’
সিইসি জানান, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে কমিশনের প্রতিশ্রুতি শুনে কানাডাসহ বিদেশি দেশগুলো সন্তুষ্ট। তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ইসির অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ দেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে ভোটারদের আস্থাও বাড়বে। বিশেষ করে প্রযুক্তি ব্যবহারের যুগে এ ধরনের সাবধানতা খুবই জরুরি।