বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য প্রযুক্তিনির্ভর অন্তর্ভুক্তির দ্বার খুলে দিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলার সুযোগ করে দিতে সরকার আনছে বাংলা ভাষাভিত্তিক একগুচ্ছ নতুন সফটওয়্যার। স্ক্রিন রিডার, ব্রেইল কনভার্টার ও সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডিজিটাইজেশনভিত্তিক এই সফটওয়্যারগুলো খুব শীঘ্রই সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এরই মধ্যে বাংলা ইশারা ভাষার একটি ডেটাসেটও প্রকাশ করা হয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মঙ্গলবার “প্রতিবন্ধিতা অতিক্রমণে প্রযুক্তি” শীর্ষক কর্মশালায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বাস্তবায়নে এবং “তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ” প্রকল্পের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলা ভাষায় অ্যাক্সেসিবল প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়ন চলছে পুরোদমে।
কর্মশালার প্রধান অতিথি, আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “প্রযুক্তির মূল শক্তিই হলো সমতা—প্রতিবন্ধিতাকে সীমাবদ্ধতা না ভেবে প্রযুক্তির মাধ্যমে তা অতিক্রম করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।” তিনি বলেন, স্ক্রিন রিডার, ব্রেইল কনভার্টার ও সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ সফটওয়্যার শুধু অ্যাক্সেস নয়, বরং দক্ষতা ও ক্ষমতায়নের হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ফাউন্ডার ট্রাস্টি মনসুর আহমেদ চৌধুরী, যিনি নিজেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন সাত বছর বয়সে। তিনি বলেন, “ব্রেইল সংস্করণে তথ্য সরবরাহ শুধু একটি অধিকার নয়, এটি বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।” তিনি সরকারের এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে সফটওয়্যারগুলো দ্রুত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানান।
প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব করিম জানান, বাংলা ভাষাভাষী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সকল প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য প্রযুক্তি সহজতর করাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, টেক্সট টু সাইন পাপেট, বাংলা টেক্সট টু ব্রেইল, স্ক্রিন রিডার “আলো”, এবং টিটিএস (টেক্সট টু স্পিচ) ভিত্তিক অডিও বুক তৈরিতে দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ রিকগনিশন সিস্টেম নিয়েও কাজ চলছে।
এদিন একটি বড় মাইলফলক ছুঁয়ে গেছে সরকার—বাংলা ইশারা ভাষার ডেটাসেট উন্মুক্ত করে দিয়েছে https://huggingface.co/datasets/banglagov/Ban-Sign-Sent-9K-V1 এই ঠিকানায়। এটি গবেষক, ডেভেলপার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত থাকবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অংশীজন, গবেষক ও শিক্ষাবিদরা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও মতামত ভাগ করে নেন, আর দোভাষী হিসেবে ইশারা ভাষায় সমান্তরাল অনুবাদ করেন আরাফাত সুলতানা লতা ও আরিফুল ইসলাম।