
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল ‘বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ’ কর্তৃক ১৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ‘ঢাকা লকডাউন’ ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১২ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে আনসার ক্যাম্প (ছাত্র আন্দোলন চত্বর) ঘুরে পুনরায় প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়।
মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। এসময় তারা বলেন, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘আওয়ামীলীগের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান’, ‘ছাত্রলীগের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান’, ‘আওয়ামীলীগের গালে গালে, ‘জুতা মারো তালে তালে’, দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিবো রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ছাত্রলীগের ঠাঁই নাই’, ‘কই গেলি রে কই গেলি, ছাত্রলীগ কই গেলি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থী মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে সারা বাংলাদেশে আবার জালাও পোড়াও আন্দলোন শুরু করেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি আমাদের বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য গাড়ি পুড়িয়েছে। যে কাজ গুলো গত ১৭ বছর চালিয়েছে তা আবার শুরু করেছে। আমরা বলতে চাই যে, এই বাংলা থেকে যে ফ্যাসিবাদ স্বমূলে উৎখাত হয়েছে সেই ফ্যাসিবাদ’কে আবার এই বাংলাই ফিরতে দিব না। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি থেকে গর্জন করে বলতে চাই এই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৪ এর গণ-জোয়ার উঠেছিল। সেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থাকে আবার আমরা আওয়ামীলীগকে প্রতিহত করব।’
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী তানভীর হোসাইন বলেন, ‘আমরা এরাতে একত্রিত হয়েছি শুধু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গর্জন উঠানোর জন্য কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়। আমরা এসেছি এই আওয়ামীলীগকে বাংলার মাটি থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ আমরা দেখেছি জুলাই ১১ তারিখে পুরো বাংলাদেশের মধ্যে কুবি থেকে রক্তঝরা শুরু হয়েছে। আমরা আরো দেখেছি ১৬ তারিখ আবু সাঈদ ভাইকে কিভাবে মৃত্যুর বুকে ফেলে দিয়েছিল। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বলতে চাই, আমরা দেখিনি যে স্বৈরাচ্যের সহযোগী হিসেবে সন্দেহভাজন কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাদের বিবেক কখনো ফিরবে এটাই আমার প্রশ্ন। ইন্টারিম সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমি বলতে চাই, আপনারা কখন নিজেরা নিজেদের মূল কাজগুলো পর্যালোচনা করবেন? কয়েকদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, লীগ তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করছে; এই ইন্টারিম সরকার যদি তাদের এই কর্মসূচি প্রতিহত করতে না পারে, তাহলে আমাদের এমন ইন্টারিম সরকারের প্রয়োজন নেই।’
ফার্মেসি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম ভুঁইয়া বলেন, ‘১১ জুলাই, ১৮ জুলাই, ৩ রা আগস্ট, ৪ঠা আগস্ট আমাদের ওপর ছাত্রলীগ যারা যে করুণ হত্যাকান্ড চালিয়েছে আমরা কি সেই ইতিহাস ভুলে গেছি? আমাদের ভাইয়ের রক্তের দাগ কি শুকায় গেছে? এখন পর্যন্ত আমরা যদি শহীদ ভাইদের মায়ের কাছে যাই, তাদের কান্না দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনা আমরা।’
তিনি আরো বলেন, ‘রক্তের ওপর দাড়িয়ে এই চব্বিশের বাংলার ওপর দাঁড়িয়ে এখনো যারা আওয়ামীলীগকে রিলিভেন্ট ভাবতেছে আমরা তাদের জানিয়ে দিতে চাই, আওয়ামীলীগ বাংলাদেশে আর কখনো রিলিভেন্ট হবে না। আওয়ামী লীগ যদি মনে করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসবে, এটা সপ্নে কল্পনা করতে পারে কিন্তু বাস্তবিক অর্থে কখনোই সম্ভব না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কুবিয়ানরা সবসময় ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে সেই ১৮ জুলাই, ১১ জুলাই যে রকম প্রতিরোধ গড়ে তুলছি, সবসময়, যদি কখনো আওয়ামী লীগের মতো অন্য কেউ ফ্যাসিজম সৃষ্টি করতে চায় আমরা রুখে দেবো।’
উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষিত হবে আগামীকাল (১৩ নভেম্বর)। গত ২৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ তারিখ নির্ধারণ করে। এ রায়কে ঘিরে আওয়ামী লীগের স্থগিত নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ২ নভেম্বর ফেসবুক টকশোতে ১৩ নভেম্বর ঢাকা লকডাউনের ডাক দেন।