রাজধানী দখলের গোপন পরিকল্পনায় গেরিলা প্রশিক্ষণ, আওয়ামী নেতাকর্মী গ্রেফতার - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জামায়াতের যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামল রাজবাড়ীতে ৩১ শিক্ষার্থী পেল এসইডিপি সম্মাননা ঢাবির জহুরুল হক হলে জুতা রাখার র‍্যাক বিতরণ করল প্রশাসন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে গ্রীন ভয়েসের পাঠচক্র “প্রয়াস” অনুষ্ঠিত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাদের ঢালাই ভেঙে আহত ১২ শ্রমিক, সাটারিংয়ে বাঁশ ব্যবহারের অভিযোগ অদম্য ২৪ উদ্বোধনে ‘ইতিহাস বিকৃতি’র অভিযোগে ছাত্রদল নেতার প্রতিবাদ রাজধানী দখলের গোপন পরিকল্পনায় গেরিলা প্রশিক্ষণ, আওয়ামী নেতাকর্মী গ্রেফতার গাজায় ত্রাণ নেওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ গেল ৭১ জনের জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউ নিয়ে কাজ করবে: মিলল গোপন প্রমাণ

রাজধানী দখলের গোপন পরিকল্পনায় গেরিলা প্রশিক্ষণ, আওয়ামী নেতাকর্মী গ্রেফতার

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫
  • ১৮ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই একের পর এক ষড়যন্ত্রের চিত্র উঠে আসছে। পরাজিত রাজনৈতিক শক্তির অংশ হিসেবে কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবার রাজধানী ঢাকা দখলের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে সরকারের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। এই পরিকল্পনায় মাসের পর মাস ধরে প্রশিক্ষিত হয়েছে হাজার হাজার নেতাকর্মী, যাদের মধ্যে আছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের সদস্যরাও। প্রশিক্ষণের স্থান ছিল দিল্লি, কলকাতা, গোপালগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গা।

৮ জুলাই রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে ৪০০ নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কনভেনশন সেন্টারটি বুক করেছিলেন শামীমা নাসরিন শম্পা, যিনি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে হল ভাড়া নেন। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ চলে। ভেতরে দেওয়া হয় সরকারবিরোধী স্লোগান ও অস্থিরতা তৈরির নানা নির্দেশনা। প্রশিক্ষণকালে প্রতিজন অংশগ্রহণকারী ছদ্মনাম ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করেন—কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ মালী, কেউ কাঠমিস্ত্রি পরিচয় দেন।

১৩ জুলাই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন ইউনিট অভিযান চালিয়ে ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেফতার করে—সোহেল রানা (৪৮) ও শামীমা নাসরিন শম্পা (৪৬)। সোহেল রানার বাড়ি বরগুনার তালতলীতে এবং শম্পার বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে। তারা উভয়েই আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজধানীর শাহবাগ মোড় দখল করে জনমনে ভয় সৃষ্টি করা এবং ছড়িয়ে দেওয়া যে প্রশাসনসহ রাজধানী আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এর ফলে দেশজুড়ে সহানুভূতিশীল জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও মাঠে নামবে এবং একটি বড় ধরনের সংঘাত-সংকট তৈরি হবে, যার সুযোগ নিয়ে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হবে।

ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) কামরুল হাসান বলেন, ‘এটি অনেক বড় পরিকল্পনা। তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।’ তিনি জানান, শুধু ডিবি নয়, এনএসআই ও এসবি-সহ আরও কয়েকটি সংস্থা একযোগে তদন্ত করছে। শম্পা ও সোহেল রানাকে গ্রেফতারের পর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে রাজধানীর ভাটারা থানায়। তারা রিমান্ডে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে, যা যাচাই-বাছাই চলছে।

সূত্র জানায়, এই পরিকল্পনার নির্দেশদাতা হলেন শেখ হাসিনার প্রাক্তন একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শেখর এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, যারা বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাদের নির্দেশেই সারা দেশে প্রশিক্ষিত কর্মীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার ভাষ্য মতে, এই পরিকল্পনা ছিল সুস্পষ্ট রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে সরকার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে গোপনে অভিযানে নামে, যাতে মূল চক্র পালাতে না পারে। গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, ‘দেশে নাশকতার কোনো শঙ্কা নেই, নিরাপত্তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ তবে তিনি জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ১১ দিনের বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, যাতে কোনো ষড়যন্ত্র সফল না হয়।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ‘কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তিকে ছাড় দেওয়া হবে না। যে-ই হোক, আইনের আওতায় আনা হবে।’ একইভাবে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, ‘পরাজিত রাজনৈতিক শক্তির অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আমরা সতর্ক এবং দৃঢ় প্রতিরোধে আছি। বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে, বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

বর্তমানে পুরো চক্রকে শনাক্ত করে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্ব দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই সঙ্গে জনমনে বিভ্রান্তি রোধে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সক্রিয়ভাবে তথ্য যাচাই করছে। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সেজন্য ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত দল ও ব্যক্তিরা যে সরকারের পতন ঘটিয়ে পুনরায় ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছিলেন, তা কার্যত কঠোর রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপে ভেস্তে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। সবার আশা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সামনে রেখে শান্তিপূর্ণ ও আইনি প্রক্রিয়ায় দেশের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT