পিঁপড়া : প্রকৃতির ক্ষুদে ডাক্তার - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:

পিঁপড়া : প্রকৃতির ক্ষুদে ডাক্তার

সিনান সাবিত
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১০৮ বার দেখা হয়েছে
কাক ও পিঁপড়া,পিঁপড়া
কাকের শরীরে বসে ডাক্তারি করছে পিঁপড়া (ছবি: এআই)

পিঁপড়া আহত হলে তার জন্য নিশ্চিত মৃত্যু অপেক্ষা করে না ।বিপদে পড়া সঙ্গীকে একা ফেলে রেখে এগিয়ে যাওয়ার বদলে পিঁপড়ারা দলগতভাবে আহত সদস্যকে টেনে নিয়ে আসে নিজেদের আশ্রয়ে।সেখানেই শুরু হয় প্রাথমিক চিকিৎসা। ক্ষতস্থান চেটে পরিষ্কার করা হয়, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধে নেয়া হয় বিশেষ পদক্ষেপ।কখনো সংক্রমিত অঙ্গ বাদ দেওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।

এ যেন এক ক্ষুদ্র অথচ সুবিন্যস্ত হাসপাতাল, যেখানে সেবার দায়িত্ব ভাগ করে নেয় অনেক পিঁপড়া মিলে।বহুক্ষেত্রে আহত পিঁপড়া সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে আবার দলে ফিরে আসে, দায়িত্ব পালন করে আগের মতোই।এই চিকিৎসা কৌশল শুধু ব্যক্তিগত জীবন রক্ষার জন্য নয়; এটি পুরো কলোনির সুস্থতা ও উৎপাদনশীলতা ধরে রাখার জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা।

আরও পড়ুনঃ

ডলফিনের সাথে কথা বলার যন্ত্র আবিষ্কার

সাড়ে বারো হাজার বছর আগের বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে নিয়ে এলেন বিজ্ঞানীরা

পিঁপড়াদের এই ডাক্তারি বিদ্যার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বনের পশু-পাখিদের মাঝেও।কিছু পাখি, বিশেষ করে কাক পিঁপড়াদের ব্যবহার করে নিজেদের শরীরের যত্ন নেয়।এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় “অ্যান্টিং (Anting)”। কাক অসুস্থ বোধ করলে কালবিলম্ব না করে চলে যায় পিঁপড়ার গর্ত বা ঢিবির কাছে।ডানা ছড়িয়ে মাটিতে শুয়ে অপেক্ষা করে ঝাঁক ঝাঁক পিঁপড়ার জন্য।

একসময় কুট কুট করে পিঁপড়ার দল কাককে কামড়াতে থাকে, কিন্তু কাক নির্বিকারভাবে সেই কামড় হজম করে।এর কারণ হলো,  পিঁপড়ার শরীরে থাকা ফরমিক এসিড Antiparasitic drug হিসেবে কাজ করে যা কাকের শরীরে আক্রমণকারী পরজীবীদের ধ্বংস করে ।ফলে কাকের শরীর হয়ে ওঠে পরিষ্কার, সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়। পালক থাকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, শরীর থাকে সুস্থ।

অন্যদিকে, পিঁপড়ারাও এর মাধ্যমে পায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি। খাবারের অংশ হিসেবে তারা সংগ্রহ করে ওই মৃত কোষ ও পরজীবী।এখানে নেই কোনো লিখিত চুক্তি বা পরিকল্পিত সহযোগিতা। দুই পক্ষের সহজাত আচরণ থেকেই গড়ে উঠেছে এক ধরনের পারস্পরিক সুবিধা।

আরও পড়ুনঃ

বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর উদ্ভাবন বিপ্লব ঘটাবে স্বাস্থ্যসেবায়

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) কী? ব্যবহার, সুবিধা, ঝুঁকি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

এই মিউচুয়ালিজম, এই নিরবে গড়ে ওঠা সহাবস্থান প্রকৃতির জটিল সম্পর্কের একটা সূক্ষ্ম ইঙ্গিত দেয়।কোনো আলোচনায় বসে নয়, কোনো সভা ডেকে নয়—প্রাণীরা নিজেরাই খুঁজে নিয়েছে বেঁচে থাকার সহযোগিতার পথ।

পিঁপড়াদের দলীয় চিকিৎসা, কাকের এন্টিং-এর দৃশ্য, এসব মিলে মনে করিয়ে দেয়: টিকে থাকার সংগ্রামে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সহযোগিতাও প্রকৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম।পথিবী নামের এই প্রাণভরা গ্রহে, জীবন কখনো কখনো যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে; আবার কখনো, অন্যের উপর নির্ভর করেই টিকে থাকে।

আমাদের পথ চলায় সঙ্গী হন আপনিও:

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT