অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মতো বাঘ, ওরাংওটাং, বা লালচুলে মানুষের শরীরে কমলা লোম দেখা গেলেও, পোষা বিড়ালের ক্ষেত্রে এই রঙটি একেবারেই ব্যতিক্রম। কারণ, বিড়ালের মধ্যে এই কমলা রঙের লোম সাধারণত পুরুষদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়, এবং এটি সরাসরি তাদের লিঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
বহুদিন ধরে বিজ্ঞানীরা ধারণা করে আসছিলেন যে বিড়ালের X ক্রোমোজোমে একটি অজানা ‘কমলা জিন’ আছে, যা তাদের এই বিশেষ রঙের জন্য দায়ী। তবে শত বছরের গবেষণার পরও এই জিনকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে জাপানের কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হিরোইয়ুকি সাসাকির নেতৃত্বে একটি দল এই জিনটির খোঁজ পেয়েছেন। তাঁদের গবেষণা সাময়িকী কারেন্ট বায়োলজি-তে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, পুরুষ বিড়ালের X ক্রোমোজোমে যদি ‘sex-linked orange’ নামের একটি নির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তন ঘটে, তাহলে সেই বিড়াল পুরোপুরি কমলা হয়ে যায়। অন্যদিকে, স্ত্রী বিড়ালের ক্ষেত্রে দুটি X ক্রোমোজোমেই এই পরিবর্তন থাকতে হয়, যা অনেক কম দেখা যায়।
যদি কোনো স্ত্রী বিড়ালের একটিতে কমলা এবং অন্যটিতে কালো জিন থাকে, তাহলে তার শরীরে ছোপ ছোপ রঙ হয়—যাকে ক্যালিকো বা টার্টলশেল বলা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি কোষে একটি করে X ক্রোমোজোম এলোমেলোভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, যার ফলে দেহের বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন রঙের লোম তৈরি হয়।
গবেষণায় ১৮টি বিড়ালের ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হয়—যার মধ্যে ১০টি ছিল কমলা এবং ৮টি ছিল অন্যান্য রঙের। দেখা যায়, সব কমলা বিড়ালেরই ARHGAP36 নামক একটি জিনে নির্দিষ্ট অংশ মুছে গেছে, যা অন্য বিড়ালদের মধ্যে পাওয়া যায়নি।
এখন পর্যন্ত এই জিনকে শরীরের বিকাশে ভূমিকা রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধরা হলেও, রঙের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আছে বলে আগে কেউ ভাবেনি। গবেষকরা দেখেছেন, কমলা রঙের বিড়ালদের পিগমেন্ট কোষে এই জিনটি অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয় হয়, যার ফলে লোমের স্বাভাবিক রঙ নির্ধারণের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
এই অস্বাভাবিক জিন-প্রকাশ কেবল রঙ নয়, বিড়ালের আচরণেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। যদিও এখনো কমলা বিড়ালের ব্যক্তিত্ব নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে বিস্তৃত গবেষণা হয়নি, তবুও অনেক মালিক বিশ্বাস করেন, তাদের স্বভাব অন্য রঙের বিড়ালের চেয়ে ভিন্ন।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, যেহেতু অধিকাংশ কমলা বিড়াল পুরুষ, তাই তাদের মধ্যে যে দুষ্টুমিপূর্ণ ও বন্ধুসুলভ স্বভাব দেখা যায়, তার পেছনেও জিনগত প্রভাব থাকতে পারে।
এই আবিষ্কার শুধু পোষা বিড়ালের রঙ ও স্বভাব বুঝতেই সাহায্য করবে না, ভবিষ্যতে প্রাণীর আচরণ ও জিনের সম্পর্ক নিয়েও নতুন পথ খুলে দেবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।