৯ এপ্রিল বাংলাদেশে স্টারলিংকের পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হবার কথা আর ৯ এপ্রিল, আমাজন তাদের মহাকাশভিত্তিক ইন্টারনেট প্রকল্প ‘প্রজেক্ট কুইপার’ চালু করতে যাচ্ছে।
প্রজেক্ট কুইপার’ -এর আওতায় ২৭টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিয়েছে। আগামী ৯ এপ্রিল, বুধবার, ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে প্রকল্পটির প্রথম আনুষ্ঠানিক উৎক্ষেপণ হবে। আমাজনের এই নতুন উদ্যোগ সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ফেলছে এলন মাস্কের স্টারলিংককে, যা ইতোমধ্যে ৭,০০০-এর বেশি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করছে।
২০১৯ সালে ঘোষণা দেওয়া এই প্রকল্পে আমাজন ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। পুরো পরিকল্পনার আওতায় ৮০টি উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ৩,২০০টি LEO (Low Earth Orbit) স্যাটেলাইট পাঠানো হবে। এসব স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে ৬৩০ কিমি ওপরে, ঘণ্টায় প্রায় ২৭,০০০ কিমি গতিতে কক্ষপথে ঘুরবে এবং প্রতি ৯০ মিনিটে একবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে।
প্রথম ব্যাচ ‘KA-01’ বা ‘কুইপার অ্যাটলাস ১’ নামে পরিচিত এবং এটি ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্সের অ্যাটলাস V রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হবে।
আমাজনের মহাকাশ ইন্টারনেট প্রকল্প ‘প্রজেক্ট কুইপার’-এর প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ৯ এপ্রিল
আমাজন জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শেষের দিকেই তারা উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা চালু করতে চায়। এই সেবা বিশ্বব্যাপী প্রাপ্তিযোগ্য হবে, এমনকি দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকাতেও, যেখানে এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছেনি। ব্যবহারকারীদের জন্য থাকবে বিভিন্ন মাপের স্যাটেলাইট টার্মিনাল। সবচেয়ে ছোটটি মাত্র সাত ইঞ্চির স্কোয়ার আকৃতির, ওজন মাত্র এক পাউন্ড, যা ১০০ এমবি পর্যন্ত গতি দেবে। অন্যদিকে বাসা-বাড়ি ও ব্যবসায়িক ব্যবহারের জন্য বড় ডিভাইস থাকবে, যা ১ জিবি পর্যন্ত ইন্টারনেট গতি দিতে সক্ষম। প্রতিটি টার্মিনাল উৎপাদন খরচ ৪০০ ডলারের নিচে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ক্যুইপার এর টার্মিনাল ডিভাইস বাসা বাড়ি, বা ব্যবসার জন্য আলাদাভাবে।
বর্তমানে স্টারলিংক এই খাতে শীর্ষে থাকলেও, বিশ্লেষকদের মতে আমাজনের বিশাল অবকাঠামো, অভিজ্ঞ প্রযুক্তি টিম এবং অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এটি স্টারলিংকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে। আমাজনের উৎক্ষেপণ অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে Arianespace, Blue Origin এবং এমনকি SpaceX-ও, যা এলন মাস্কের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান।
Quandary Peak Research-এর নির্বাহী সহ-সভাপতি ও USC-এর কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মাহদি এসলামিমেহর বলেন, “স্টারলিংক এই মুহূর্তে বাজারে আধিপত্য বজায় রাখলেও, চীনসহ অন্যান্য শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী এবং আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর আগমনে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে।”
বৈশিষ্ট্য | Starlink | Project Kuiper |
---|---|---|
প্রতিষ্ঠাতা | Elon Musk | Jeff Bezos / Amazon |
স্যাটেলাইট সংখ্যা | ৭,০০০+ (২০২৫ পর্যন্ত) | ৩,২০০ পরিকল্পিত |
সূচনা বছর | ২০১৯ | ২০২৫ (প্রথম উৎক্ষেপণ) |
ইন্টারনেট গতি | ৫০ Mbps – ১ Gbps | ১০০ Mbps – ১ Gbps |
মোবাইল সাপোর্ট | আছে | থাকবে |
সেভেন সিস্টার্সে বিনিয়োগে আগ্রহী ভারত, আয়োজন হবে আন্তর্জাতিক সম্মেলন
এই স্যাটেলাইটগুলোতে রয়েছে বিশেষ ধরনের ‘ডাই-ইলেকট্রিক মিরর ফিল্ম’ আবরণ, যা সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে সেগুলোকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে কম দৃশ্যমান করে তোলে। এর ফলে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সহজে আকাশ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। আমাজন বলছে, এটি একটি ‘কুইপার ইউনিক’ প্রযুক্তি।
আমাজনের দাবি,, ‘প্রজেক্ট কুইপার’ কেবল একটি ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি বিশ্বের ডিজিটাল বিভাজন দূর করার একটি সামাজিক পদক্ষেপ। উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষ করে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামীণ এলাকাগুলোতে এই সেবা ডিজিটাল শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ব্যবসায়িক প্রবেশাধিকার বাড়াতে সহায়তা করবে।
আমাজনের প্রকল্প প্রধান রাজীব বাডিয়াল বলেন, “আমরা স্থলভিত্তিক পরীক্ষায় অনেক দূর এগিয়েছি, কিন্তু কিছু জিনিস আছে যা শুধুমাত্র মহাকাশে গিয়েই বোঝা সম্ভব। এটাই প্রথমবার আমরা আমাদের চূড়ান্ত স্যাটেলাইট ডিজাইন মহাকাশে পাঠাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “এই মিশন যেভাবেই যাক, এটি কেবল শুরু মাত্র। সামনে আরও অনেক উৎক্ষেপণ হবে।”
ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট যেন একটি মৌলিক অধিকার হয়ে উঠেছে। কিন্তু এখনও বিশ্বের বহু মানুষ এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। সেই অভাব পূরণে এগিয়ে এসেছে আমাজনের ‘প্রজেক্ট কুইপার’। সফল হলে এটি বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবস্থার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে—যেখানে আকাশ থেকেই মিলবে তথ্যের দুনিয়ায় প্রবেশাধিকার।