আলীকদমের তৈন খালে ভেসে গেল ৩ পর্যটক, গ্রেফতার গ্রুপ এডমিন - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর দাবি – গাজা গণহত্যার দায়ে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া থেকে নিষিদ্ধ করা হোক গ্রিসে শ্রমিক সংকটে বাংলাদেশি মালিকানাধীন গার্মেন্টস খাতও বিপর্যস্ত নিখোঁজের দুই দিন পর নদী থেকে উদ্ধার মসজিদের ইমামের মরদেহ জাতিসংঘের কমিশন গাজার ওপর ইসরাইলের যুদ্ধকে গণহত্যা ঘোষণা করেছে পীরগাছায় পদ্মরাগ ট্রেনের ছয় বগি লাইনচ্যুত, রংপুর-লালমনিরহাট ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ আসাদুজ্জামান নূরের ফ্ল্যাট, জমি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলার ফন্দি ইসরায়েল-ভারতের! নবীনদের পদচারণায় মুখরিত শেকৃবি কুবি শিক্ষার্থী ও মা হত্যা: সুষ্ঠু তদন্তে বিক্ষোভ মিছিল শেষে স্মারকলিপি প্রদান আত্রাইয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

আলীকদমের তৈন খালে ভেসে গেল ৩ পর্যটক, গ্রেফতার গ্রুপ এডমিন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫
  • ২০৯ বার দেখা হয়েছে

বান্দরবানের আলীকদমে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে তিনজন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন মো. হাসান চৌধুরী শুভ। স্থানীয় প্রশাসন, পর্যটক এবং এলাকাবাসীর মাঝে চলছে শোক ও উৎকণ্ঠা।

গত ১১ জুন (বুধবার) ‘ট্যুর এক্সপার্ট’ নামের ফেসবুক গ্রুপের এডমিন বর্ষা ইসলামের নেতৃত্বে ৩৩ জনের একটি দল আলীকদমে যায়। তারা ক্রিসতং রুংরাং পাহাড় ও থানচির লিমান লিবলু এবং সাকাহাফং চূড়া জয় করার উদ্দেশ্যে ট্রিপে অংশ নেন। গ্রুপটি দুইভাগে বিভক্ত হয়। ২২ জনের একটি দলের দায়িত্বে ছিলেন কো-হোস্ট হাসান এবং অপর ১১ জনের নেতৃত্বে ছিলেন বর্ষা।

১১ জুন রাতে শামুক ঝিরি পার হওয়ার সময় হঠাৎ পাহাড়ি ঢল নামলে তিনজন পর্যটক স্রোতে ভেসে যান। ১২ জুন সকালে ফরেস্ট ঘাট এলাকা থেকে শেখ জুবাইরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তৈন খালের মোড় থেকে স্মৃতি আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন হাসান চৌধুরী শুভ।

এ ঘটনায় স্মৃতি আক্তারের বাবা আলীকদম থানায় বর্ষা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বর্ষা ইসলাম প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য না দিয়ে ৩৩ জনের বিশাল দল নিয়ে দুর্গম পাহাড়ে ট্রিপের আয়োজন করেন। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মাত্র একজন গাইড নিয়ে এমন ট্রিপ আয়োজনের কারণেই এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। মামলার পর বর্ষা ইসলামকে আটক করে আদালতে চালান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আলীকদম থানা পুলিশ।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসানকে নিয়ে এক সহযাত্রী স্মৃতি শেয়ার করে লিখেছেন, “গত মার্চে হাজিরাম পাড়ায় এক আদিবাসী মেয়ের হ্যামক ছিঁড়ে গেলে সবাই মিলে টাকা তুলে হাসানের মাধ্যমে ওর জন্য নতুন হ্যামক কিনে দিই। সেদিন থেকেই ওর সঙ্গে পরিচয়। জানি না, সে বেঁচে আছে কিনা। আল্লাহর কাছে দোয়া করি সে যেন ফিরে আসে।”

স্থানীয়রা জানায়, এখন অনেকেই সামান্য অভিজ্ঞতা নিয়ে পাহাড়ে গ্রুপ ট্রিপের আয়োজন করছেন। নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ি ট্রিপ দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও বোঝা গেল পাহাড়ি ট্রিপে অভিজ্ঞতা এবং নিরাপত্তার গুরুত্ব কতটা। বিশেষ করে বর্ষাকালে পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণে সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন।

ঘটনার দিন ১৯ জন পর্যটক নিরাপদে খাল পার হলেও হাসান, শেখ জুবাইরুল ইসলাম এবং স্মৃতি আক্তার ঢলের পানিতে ভেসে যান। এরমধ্যে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার হলেও হাসানের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী এখনো তার খোঁজে প্রহর গুনছেন।

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিখোঁজ হাসানের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার কারণ ও ট্রিপের আয়োজকদের দায়িত্বহীনতার বিষয়েও তদন্ত হচ্ছে।

এদিকে অনেকেই বলছেন, ২০২৩ সালে একই গ্রুপের সাবেক এডমিন আতাহার ইশরাক রাফির মৃত্যুর পর বর্ষা ইসলাম ট্র্যাভেল গ্রুপ খুলে আবার পাহাড়ি ট্রিপ শুরু করেন। সেই ঘটনার দুই বছর পর আবারও তার গ্রুপের ট্রিপে এ দুর্ঘটনা। এতে প্রশ্ন উঠেছে পাহাড় ভ্রমণে গ্রুপ কালচার ও অদক্ষ হোস্টদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বিষয় নিয়ে।

পরিবার, সহযাত্রী ও এলাকাবাসী নিখোঁজ হাসানের জন্য দোয়া করছেন। জীবিত অবস্থায় হলেও অন্তত মরদেহ ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন তারা। একইসঙ্গে পাহাড় ভ্রমণে অভিজ্ঞতা, নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়া ট্রিপ না করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT