যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজেদের ইতিহাস গড়ল। দেশটির বালখ প্রদেশের একটি বেসরকারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতো ইউরোপের বাজারে ২১ টন ডিটারজেন্ট রপ্তানি করেছে। রোববার দেশটির শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম টোলো নিউজ এ তথ্য প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তারা জানান, আফগানিস্তানের ওই প্রতিষ্ঠানটি লন্ডনের সঙ্গে পাঁচ বছরের রপ্তানি চুক্তি সম্পন্ন করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রাসুলদাদ আমিনি বলেন, ‘এটি আমাদের তৃতীয় চালান। প্রথম চালান রপ্তানি হয়েছিল তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানে। আর আজ আমরা এশিয়া থেকে ইউরোপে পৌঁছেছি। আমাদের জন্য এটি গর্বের মুহূর্ত।’
বালখ প্রদেশের শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগের প্রধান আমির মোহাম্মদ মুততাকি এই রপ্তানিকে আফগানিস্তানের উৎপাদন ও বেসরকারি খাতের জন্য “নতুন যুগের সূচনা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এই উদ্ভাবনগুলো প্রমাণ করে যে, আফগান পণ্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের উপযোগী এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের সক্ষমতা রাখে।’
বেসরকারি খাতের নেতারাও রপ্তানিমুখী উদ্যোগকে দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে মত দিয়েছেন।
বালখ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের প্রধান আসাদুল্লাহ আসাদি বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এখন আমাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্যও এগোতে হবে। আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য না আনলে এবং আত্মনির্ভরশীল না হলে জাতি হিসেবে মর্যাদা ফিরে পাওয়া যাবে না।’
বালখ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড মাইনস-এর প্রধান ইমামউদ্দিন সানায়ি জাদা বলেন, ‘আমাদের অভিবাসী ভাইদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। আর কতদিন আমরা অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব?’
শুধু ডিটারজেন্ট নয়, বর্তমানে আফগানিস্তান ইউরোপে কৃষিপণ্য, কার্পেট, ঐতিহ্যবাহী পোশাক, মূল্যবান রত্নপাথর এবং কার্বনেটেড পানীয় রপ্তানি করছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান বলছে, আফগানিস্তানের ইউরোপীয় বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় অংকে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাঁচ বছরের এই চুক্তি এবং ধারাবাহিক রপ্তানি আফগানিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক বাজারে জাতির মর্যাদা ফেরানোর পথে বড় সাফল্য।