
বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন, দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটার পর রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন জিয়া উদ্যানে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার দুপুর ৩টায় শুরু হওয়া জানাজায় বিএনপি নেতা-কর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের ঢল নামে। সংসদ ভবন এলাকা ছাড়িয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণী ও তেজগাঁও পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটারজুড়ে মানুষের উপস্থিতিতে এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
জানাজা শেষে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো মরদেহ কড়া নিরাপত্তায় লাশবাহী গাড়িতে করে জিয়া উদ্যানে নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশেষ বাহনে মরদেহ সমাধিস্থলের কাছে নেওয়া হলে সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা কফিন কাঁধে বহন করেন।
বেগম খালেদা জিয়ার কবরে প্রথম নামেন তাঁর বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিজ হাতে তিনি মাকে কবরে শায়িত করেন। দাফন শেষে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
দাফন কার্যক্রমের সময় উপস্থিত ছিলেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা রহমান, আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান, নাতনি জাহিয়া ও জাফিরা রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা। বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও সমাধিস্থলে শোক ও শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠিত জানাজায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যক্তিরা অংশ নেন।
এ ছাড়া ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এবং পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার বেগম খালেদা জিয়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। বিদেশি অতিথিরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
জানাজার আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বেগম খালেদা জিয়ার জীবন ও রাজনৈতিক সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন।
এর আগে সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে মরদেহ গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় নেওয়া হয়। দুপুর পৌনে ১১টার দিকে কফিনবাহী গাড়ি মানিক মিয়া এভিনিউয়ে পৌঁছালে সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংসদ ভবন এলাকা ও আশপাশে পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে এবং বুধবার সারাদেশে সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়।