
গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশে নতুন করে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক বক্তারা। তাদের দাবি, যারা দিল্লির তাবেদারি করে তারাই দেশে ধারাবাহিকভাবে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে এবং এরই অংশ হিসেবে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকায় আগুন দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া অডিটোরিয়ামে ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি ও নয়া বন্দোবস্ত’ শীর্ষক আলোচনা ও প্রতিবাদ সভায় এসব অভিযোগ উঠে আসে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ কখনোই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ছিল না। তিনি বলেন, “৪৭ কিংবা ৭১—কোনো ইতিহাসই বাদ দিয়ে দেখা যাবে না। ৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও আমরা এর প্রকৃত ফসল তুলতে পারিনি ভারতীয় আগ্রাসনের কারণে।”
তিনি আরো দাবি করেন, ভারত কখনো বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু ছিল না এবং বিভিন্ন সময় ‘র’–এর মাধ্যমে দেশে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে।
ব্যারিস্টার শাহরিয়ার তার বক্তব্যে বলেন, জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও জুলাই আন্দোলনে নিহতদের মরদেহ পোড়ানোর নির্দেশ কারা দিয়েছিল। তিনি বলেন, “আমরা পোড়ানোর রাজনীতি করি না। মৃত্যুর ফয়সালা জমিনে নয়, আসমানে হয়—এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা দাঁড়িয়ে আছি।”
জুলাই রেভলুশনারি জার্নালিস্টস অ্যালায়েন্সের সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল ফরাজী বলেন, নয়া বন্দোবস্ত মানে ফ্যাসিবাদের বিলুপ্তি হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, নয়া বন্দোবস্তের নামে কয়েকজন উপদেষ্টা গাদ্দারি করেছেন।
তিনি বলেন, “যদি উসকানির দায়ে কোনো গণমাধ্যমের নিবন্ধন বাতিল হয়, তাহলে আওয়ামী আমলের সব মিডিয়ার ক্ষেত্রেই একই নীতি প্রযোজ্য হতে হবে।”
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ‘মায়াকান্না’ প্রসঙ্গে ইসরাফিল ফরাজী বলেন, “নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম, আমার দেশ কিংবা দিগন্ত টিভির ওপর হামলার সময় এই সুশীলতা দেখা যায়নি কেন?”
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, অতীতের ফ্যাসিবাদ যেমন মানা হয়নি, নতুন ফ্যাসিবাদও মানা হবে না। তিনি বলেন, “হিন্দুস্তানের নীলনকশার সামনে মাথা নত করে বাংলাদেশে রাজনীতি করা যাবে না।”
মেজর (অব.) শাহিন বলেন, এক-এগারোর অবৈধ সরকারের কুশীলব ছিল প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। তার দাবি, গত দুই দশকে এই দুটি পত্রিকা বিএনপিসহ বিরোধী রাজনীতির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে।
লে. কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বলেন, দাড়ি-টুপিকে জঙ্গিবাদের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার। তিনি বলেন, “হাদি, সাদিক কায়েম কিংবা মওলানা ভাসানী—সবাই মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে এসেছেন এবং তারাই প্রকৃত অর্থে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব।”
সভায় সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন ফাহিম ফারুকী। এছাড়া অনুষ্ঠানে মেজর জেনারেল (অব.) মাহবুব, সংগঠক ডিউক হুদাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।