মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিল। ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই এই হামলার নেতৃত্বের ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার (২১ জুন) ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ বলেন, “ইরানের ফোর্ডো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রে সফলভাবে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী ও ইসরায়েলি বাহিনী এ যৌথ অভিযান চালায়। সব বিমান নিরাপদে ফিরেছে। এখন শান্তির সময়।”
এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের ‘ফোর্ডো’ পারমাণবিক প্ল্যান্ট, যা পাহাড়ের ৩০০ ফুট নিচে অবস্থিত। এই স্থাপনায় হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বোমা GBU-57 MOP (Massive Ordnance Penetrator), যার ওজন ৩০,০০০ পাউন্ড। এই বোমা বহনে সক্ষম একমাত্র বিমান B-2 Stealth Bomber।
অভিযানে ‘নাতাঞ্জ’ এবং ‘ইসফাহান’ পারমাণবিক কেন্দ্রে আক্রমণও করা হয়। ট্রাম্প দাবি করেন, “সম্পূর্ণ সফলভাবে এই হামলা সম্পন্ন হয়েছে এবং ইরানের আকাশপথ থেকে সব বিমান নিরাপদে চলে এসেছে।”
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা চরমে। ইসরায়েল দাবি করে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি। যদিও ইরান বরাবরই বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
এর আগে ২০১৮ সালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ওবামার করা ‘ইরান পারমাণবিক চুক্তি’ থেকে সরিয়ে নেন। এরপর থেকে দু’দেশের সম্পর্ক অবনতির দিকেই যায়। সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক অভিযান চালালো।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক বিবৃতিতে বলেন, “এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চরম ক্ষতির কারণ হবে। আমরা প্রতিশোধ নেবো।”
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র ও সংগঠন এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয় পক্ষই একে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা বাড়ানোর আশঙ্কা বলে উল্লেখ করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও সংকটময় করবে। কারণ ইরান এখন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকেও শত্রু মনে করছে। তুরস্ক, কাতার ও লেবাননের হিজবুল্লাহ সংগঠন ইরানপন্থী অবস্থান নিয়েছে। এতে অঞ্চলজুড়ে আরও বড় যুদ্ধের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না। তবে ইরান যেন কখনো পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই এ অভিযান।”
ইরান জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২০০-এর বেশি বেসামরিক নিহত এবং অসংখ্য আহত। তবে ইসরায়েল বলছে, তারা শুধু পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় আক্রমণ করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, “এটা ছিল আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।”
ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, “ইরানের সর্বোচ্চ নেতার অবস্থান আমাদের জানা। চাইলে তাকেও সরিয়ে দেওয়া সম্ভব। তবে এখন আমরা শান্তি চাই।”
বিশ্ববাসী এখন অপেক্ষা করছে — ইরান পাল্টা জবাব দেবে কি না।