বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী ব্যক্তি ২০২৫ ‘টাইম ১০০: বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের তালিকা’। এ তালিকায় ‘লিডারস’ (Leaders) ক্যাটাগরিতে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশ্বনেতাদের এই তালিকায় তাঁর নাম যুক্ত হওয়ায় আবারও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশ।
টাইম ম্যাগাজিনের মতে, ড. ইউনূস কেবল তার অতীতের মাইক্রোফাইন্যান্স ও সামাজিক ব্যবসার মতো যুগান্তকারী উদ্ভাবনের জন্যই নয়, বরং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন ও নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বর্তমান ভূমিকার কারণেও এ স্বীকৃতি পেয়েছেন।
সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথমবার চট্টগ্রাম যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সংঘটিত এক গণআন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসকের পতনের পর ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। এই সময়টিতে তিনি দেশে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার, মানবাধিকার রক্ষার ও জবাবদিহিমূলক শাসন প্রতিষ্ঠার পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত হন।
ড. ইউনূসকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনে মুখবন্ধ লিখেছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন। তিনি লিখেছেন,
“ছাত্র-নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের পর যখন বাংলাদেশের স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী সরে যেতে বাধ্য হন, তখন এক সুপরিচিত নেতা সামনে এসে জাতিকে গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নেন — তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূস।”
— হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন,
“অনেক বছর আগে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখান ইউনূস। তার উদ্যোগের সুফল পেয়েছেন লাখ লাখ মানুষ, যাদের ৯৭ শতাংশই নারী।”
— হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
হিলারি জানান, ইউনূসের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাসে, যখন তিনি এবং বিল ক্লিনটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একই ধরনের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি চালুর চিন্তা করছিলেন।
ড. ইউনূসের পাশাপাশি এ বছর টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালী ব্যক্তি ২০২৫ তালিকায় রয়েছেন আরও অনেক বিশ্বনেতা ও খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব। তাদের মধ্যে রয়েছেন—
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাম
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই
স্পেসএক্স ও টেসলার সিইও ইলন মাস্ক
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ
গায়ক এড শিরান, অভিনেত্রী ক্রিস্টেন বেল, ডেমি মুর, স্কারলেট জোহানসন, টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস প্রমুখ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, এ বছর টাইম ম্যাগাজিনের এই তালিকায় কোনো ভারতীয় নাগরিকের নাম নেই, যা ২০২৪ সালের তালিকার তুলনায় ব্যতিক্রম। গত বছর বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাট ও অলিম্পিয়ান সাক্ষী মালিক তালিকায় ছিলেন। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক কোম্পানি ভার্টেক্স ফার্মাসিউটিক্যালসের সিইও রেশমা কেওয়ালরামানি, যিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত, এ বছর ‘লিডারস’ ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, “ড. ইউনূসের টাইম ১০০-তে অন্তর্ভুক্তি শুধু তার ব্যক্তি অর্জনের স্বীকৃতি নয়, বরং এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সম্মান, যা আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।”