বলপ্রয়োগ নয়, বুদ্ধি ও মানবিকতার মাধ্যমে জনশৃঙ্খলা রক্ষা করে নজির গড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কনস্টেবল মো. রিয়াদ হোসেনকে এবার দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা)। আন্দোলন দমনে অভিনব কৌশল প্রয়োগ করে তিনি যে ব্যতিক্রমী ভূমিকা পালন করেছিলেন, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসিত হয়েছিল দেশজুড়ে। এবার তার এই মানবিক ও বুদ্ধিদীপ্ত পুলিশিংয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা)।
গত ২৭ মার্চ রাষ্ট্রপতির আদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন সিনিয়র সহকারী সচিব তৌফিক আহমেদ। রোববার (৬ এপ্রিল) প্রজ্ঞাপনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে,
“২০২৫ সালে নাগরিকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জনশৃঙ্খলা রক্ষায় অভিনব ও বুদ্ধিদীপ্ত পুলিশিং কৌশলের স্বীকৃতি হিসেবে কনস্টেবল মো. রিয়াদ হোসেনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা)’ প্রদান করা হলো।”
এই পদক প্রদানের আদেশ প্রজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকেই কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়।
আরও পড়ুনঃ
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা: আস্থা হারাচ্ছে বিএনপি
“ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাণিজ্যে ক্ষতি হবে না”- বাণিজ্য উপদেষ্টা
ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর সচিবালয়ের সামনে। সেখানে কিছু আন্দোলনকারী অবস্থান করছিলেন। সাধারণত এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটা বা বলপ্রয়োগ করে থাকে। কিন্তু কনস্টেবল রিয়াদ সেদিন ভিন্ন পথে হাঁটেন। তিনি কোনোভাবেই কাউকে আঘাত না করে প্রতীকীভাবে লাঠি চালানোর অভিনয় করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করেন। তার এই কর্মকৌশল আন্দোলনকারীদের মধ্যেও ভীতির সৃষ্টি না করে শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
এ ঘটনাটির ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, রিয়াদ অত্যন্ত সংযত ও ধৈর্যশীল ভঙ্গিতে দায়িত্ব পালন করছেন। সাধারণ মানুষ ও বিশিষ্টজনেরা তার প্রশংসায় মেতে ওঠেন। পুলিশ সদস্যদের প্রতি জনসাধারণের আস্থা বাড়াতে রিয়াদের এই ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সাধারণত ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক’ পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়। তবে কনস্টেবল রিয়াদের ক্ষেত্রে এটি একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। তাকে আলাদাভাবে এবং সময়ের আগেই এই সম্মাননা দেওয়া হলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবা হক বলেন,
“এটি একটি যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত। পুলিশিং মানেই বলপ্রয়োগ নয়—মানবিকতা ও কৌশলও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। রিয়াদের মতো পুলিশ সদস্যরা তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠবেন।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “রিয়াদ হোসেনের এই ধরনের আচরণই একটি আধুনিক ও জনবান্ধব পুলিশের প্রতিচ্ছবি। তাকে এই সম্মাননা প্রদান আমাদের জন্যও গর্বের বিষয়।”
পুরস্কারপ্রাপ্তি সম্পর্কে নিজের প্রতিক্রিয়ায় কনস্টেবল রিয়াদ হোসেন বলেন,
“আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমি চাইনি কেউ আহত হোক বা আতঙ্কিত হোক। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষাই আমার প্রথম অঙ্গীকার।”
আমাদের পথ চলায় সঙ্গী হন আপনিও: