২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া সুদানের যুদ্ধ দেশটিকে গভীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানবিক সংকটে ফেলে দিয়েছে। এই বিপর্যয়ের গভীরতা সত্ত্বেও, এটি অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকটগুলোর তুলনায় যথেষ্ট আন্তর্জাতিক মনোযোগ এবং সংবাদমাধ্যমের কাভারেজ পেতে ব্যর্থ হয়েছে, যেমন গাজা, লেবানন এবং সম্প্রতি সিরিয়ার সংকট।
সুদানের ভয়াবহ অবস্থার মাপ এবং এর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় ধরে, বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমে এই সংকটের নিউজ কভারেজে একটি বড় শূন্যতা দেখা গেছে।
২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১.৪ কোটি মানুষ—যা সুদানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ—বাস্তুহীন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ১.১ কোটি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত এবং ৩.১ মিলিয়ন মানুষ প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে ৫৩ শতাংশই ১৮ বছরের নিচের শিশু। সংকটের কারণে ৩ কোটিরও বেশি সুদানিজ মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তায় পড়েছে, এবং উত্তর দারফুরের জামজাম ক্যাম্পে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এই পরিসংখ্যানগুলো কেবলমাত্র সংখ্যা নয়, এগুলো হলো বাস্তবিকভাবে চলমান সহিংসতার প্রতিচ্ছবি যা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এবং বৈশ্বিক মনোযোগ ক্রমশ সরাসরি ভিন্ন দিকে ঘুরে যাচ্ছে।
র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ), যা মূলত সুদান সরকারের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি আধাসামরিক গোষ্ঠী, ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত। এদের অপরাধের মধ্যে রয়েছে বেসামরিক লোকদের গণহত্যা, ধর্ষণ, জাতিগত সহিংসতা এবং দুর্ভিক্ষকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে দুই দিনের বোমাবর্ষণে ১২৭ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক। দারফুর থেকে আসা বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা গ্রাম ধ্বংস, পরিবার বিচ্ছিন্নতা এবং যৌন সহিংসতার ভয়াবহ কাহিনী বর্ণনা করেছেন।
সুদানের যুদ্ধ শুধুমাত্র একটি জাতীয় ট্র্যাজেডি নয়; এটি আফ্রিকার শৃঙ্গ অঞ্চলে একটি অস্থিতিশীল শক্তি হিসেবে কাজ করছে। শরণার্থীরা চাদ, মিশর এবং দক্ষিণ সুদানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোকে অভিভূত করছে। চাদ, যা ইতিমধ্যেই নিজস্ব রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি, এখন লক্ষাধিক সুদানিজ শরণার্থীর ভারে জর্জরিত।
এই ভয়াবহ বাস্তবতার সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সুদানের সংকটকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে এবং অপরাধ অব্যাহত থাকছে।
১. অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংকট সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে। ২. সুদানে সাংবাদিকদের প্রবেশ এবং কাজ করা অত্যন্ত কঠিন। ৩. সুদানের যুদ্ধের জটিল প্রকৃতি সংবাদমাধ্যমের ন্যারেটিভ তৈরি করাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
সমাধানের জন্য আহ্বান
সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব হলো সুদানের ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে মানবিক করিডোর নিশ্চিত করা, যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তদন্ত শক্তিশালী করা জরুরি।
এই সংকট নিয়ে দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ ছাড়া, সুদানের জনগণের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন আরও জটিল হয়ে উঠবে।
Leave a Reply