বগুড়ার মহাস্থান হাটে শীতকালীন সবজির দাম তলানিতে পৌঁছেছে। পাইকারি বাজারে ফুলকপি মাত্র ২ থেকে ৪ টাকা, মুলা ৫ থেকে ১০ টাকা এবং বাঁধাকপি প্রতি পিস ৬ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না, ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
মহাস্থান হাট, যা দেশের অন্যতম বড় পাইকারি সবজির মোকাম, বর্তমানে শীতকালীন সবজির সরবরাহে ভরপুর। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) হাটে ফুলকপি ২ থেকে ৪ টাকা, মুলা ২ থেকে ৫ টাকা এবং বাঁধাকপি ৬ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এমনকি দাগওয়ালা সবজির দাম আরও কম, যা কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে তুলেছে।
ফুলকপি বিক্রি করতে আসা শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক তরিকুল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষে ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মাঠ থেকে হাট পর্যন্ত পরিবহন খরচসহ প্রতি কেজি ফুলকপি উৎপাদনে ৫ টাকা খরচ হলেও পাইকারি বাজারে তা মাত্র ২ থেকে ৪ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে পুরো খরচ তুলতে না পেরে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।
কৃষক জিহাদ হাসান বলেন, “মাঠ থেকে হাটে আনতে যে পরিবহন খরচ হয়, সেটাও আমরা তুলতে পারছি না। এমন অবস্থা আগে কখনো দেখিনি।”
কৃষক আসমত আলী বলেন, “ফুলকপি চাষ করে বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ করব, তা ভেবে পাচ্ছি না।”
https://www.facebook.com/reel/1522631285102364
মহাস্থান হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ভরা মৌসুমে সবজির সরবরাহ বেড়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম পড়ে গেছে। এতে ব্যবসায়ীরাও লোকসানের শিকার হচ্ছেন।”
সবজি ব্যবসায়ী আরিফ জামান জানান, “আগে প্রতি কেজিতে ভালো লাভ থাকলেও এখন গায়ে গায়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলুবর রহমান জানান, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতকালীন সবজির উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে একসঙ্গে সবজির চাষ ও বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে দাম কমে গেছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হান্নান বলেন, “আমরা কৃষকদের আগাম সবজি চাষের পরামর্শ দিয়ে থাকি। কিন্তু ভরা মৌসুমে একসঙ্গে সবজি চাষের ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
সবজির এই দরপতনে কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন। কৃষকদের অভিযোগ, খুচরা বাজারে দামের বড় ব্যবধান থাকলেও তারা এর কোনো সুফল পাচ্ছেন না। কৃষকদের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বাজার ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন ও সরাসরি কৃষকদের থেকে পণ্য সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযানের (সুপ্র) বগুড়া জেলা শাখার সম্পাদক কেজি ফারুক বলেন, “পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামের বিশাল ব্যবধান কৃষকদের জন্য ক্ষতিকর। বাজার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ জরুরি।”
বগুড়ার মহাস্থান হাটে শীতকালীন সবজির দরপতন কৃষকদের জন্য আর্থিকভাবে ধ্বংসাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা এবং সরাসরি কৃষকদের পণ্য বিক্রির সুযোগ বাড়ানো না হলে এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কঠিন হবে। সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও কার্যকর নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা জরুরি।
Leave a Reply