হাজার হাজার মানুষ ৭০ বছর বয়সী কৃষক জগজিত সিং দালেওয়ালের অনশন আন্দোলনের পেছনে সমবেত হয়েছে। তারা কৃষি সংস্কার ও কৃষি সম্প্রদায়ের ন্যায্য ভবিষ্যতের দাবিতে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
৪ জানুয়ারি কিষান মহাপঞ্চায়েতে, যা প্রতিবেশী গ্রামগুলোর কৃষকদের একটি বিশাল সমাবেশ, দালেওয়ালের অনশনের ৪০তম দিন উদযাপিত হয়। পাঞ্জাবের এই বৃদ্ধ কৃষক ও ক্যান্সার সারভাইভার জগজিত সিং তার বক্তব্যে ভারতের কৃষির দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, “সরকারের ত্রুটিপূর্ণ নীতির কারণে হাজার হাজার কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “যদি আমার এই আত্মত্যাগ লাখ লাখ আত্মহত্যা ঠেকাতে পারে, তবে আমি আমার জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।”
দালেওয়ালের অনশন ২০২০–২০২১ সালের কৃষক আন্দোলনের ধারাবাহিকতা। সেই সময়, কৃষকরা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে এক বছরব্যাপী আন্দোলন চালায়। তখন মোদির সরকার আইনগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় এবং কৃষকদের অন্যান্য দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়।
কিন্তু তিন বছর পরেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। হতাশ কৃষকরা ২০২৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আবারও প্রতিবাদ শুরু করে।
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪-এ হরিয়ানা সীমান্তে কৃষক আন্দোলনে কৃষকদের ওপর পুলিশ ড্রোন থেকে টিয়ার গ্যাস ফেলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং দালেওয়ালের চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছে। তবে কৃষক নেতারা বলছেন, সমাধান কেবল সরকারের মাধ্যমেই আসতে পারে।
ভারতে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান ৫০ শতাংশের বেশি এবং জিডিপিতে ২০.২ শতাংশ অবদান রাখলেও কৃষকরা চরম দারিদ্র্যে দিন কাটাচ্ছেন। ২০২৩ সালের OECD রিপোর্টে বলা হয়েছে, নীতিগত কারণে ভারতীয় কৃষকরা প্রায় $১২০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
খানাউরি সীমান্তে দালেওয়াল কৃষকদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। দালেওয়ালের পুত্র গুরপিন্দর সিং বলেন, “যখনই মনোবল হারাই, আমি আমার বাবাকে ঘুমানোর সময় দেখি। তার এই আত্মত্যাগ আমাকে লড়াই চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে।”
কৃষক আন্দোলনে র শেষ কোথায় তা এখনও অনিশ্চিত। তবে এক জিনিস স্পষ্ট: ভারতীয় কৃষকরা তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন।
Leave a Reply