ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা (RAW) পাকিস্তানে ২০২১ সাল থেকে একাধিক হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগে ওঠা একটি প্রতিবেদনে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় অর্ধ ডজন হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে পাকিস্তানি ও ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার, নিহতদের সহযোগী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা, এবং পাকিস্তানি তদন্তকারীদের সংগৃহীত পুলিশ নথি ও অন্যান্য প্রমাণ পর্যালোচনা করা হয়েছে।
হত্যার পরিকল্পনার বিশদ বিবরণ
পাকিস্তানের ছয়টি হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে, এই প্রতিবেদনে একটি উচ্চাভিলাষী ভারতীয় হত্যার পরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আমির সরফরাজ টাম্বার উপর হামলাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। টাম্বা সেই ব্যক্তি, যিনি ২০১৩ সালে কোট লখপত কারাগারে ভারতীয় বন্দী সরবজিৎ সিংকে হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সাল থেকে RAW একটি পদ্ধতিগত হত্যার পরিকল্পনা পরিচালনা করেছে। পাকিস্তানি ও পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে, এতে স্থানীয় অপরাধী কিংবা আফগান ভাড়াটে হত্যাকারীদের ব্যবহার করা হয়েছে, তবে কখনও ভারতীয় নাগরিকদের সরাসরি যুক্ত করা হয়নি।
হাওয়ালা নেটওয়ার্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূমিকা
হত্যার জন্য RAW মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্যিক কেন্দ্র দুবাইয়ের ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যবহার করেছে। তারা একাধিক মহাদেশে গোপন ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক (হাওয়ালা) ব্যবহার করে অর্থ প্রদান করেছে। তাছাড়া, লক্ষ্য নির্ধারণ, হত্যাকাণ্ড পরিচালনা, এবং অর্থ প্রদানের জন্য আলাদা দল গঠন করা হয়েছে।
তদন্তে ত্রুটি ও সমালোচনা
RAW-এর কর্মকাণ্ডে কখনও কখনও ত্রুটি দেখা গেছে। যেমন, দুবাইয়ে একটি গোপন বাড়ির তথ্য পাওয়ার পর পাকিস্তানি কর্মকর্তারা সেখানে অভিযান চালিয়েছিলেন। এতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেলেও, অভিযুক্ত দুই ভারতীয় নাগরিক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তিরা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্য ছিল জাতিসংঘ স্বীকৃত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জইশ-ই-মোহাম্মদের সন্দেহভাজন নেতারা। এদিকে, পশ্চিমা দেশগুলিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে, যাদের ভারত সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে, পশ্চিমা কর্মকর্তারা ভারতের এসব অভিযোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
RAW-এর অভিযানের বিস্তৃতি
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পশ্চিমা দেশে RAW-এর কর্মকাণ্ড পাকিস্তানে প্রথমে পরীক্ষা ও পরিশীলিত করা হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমে এই পদ্ধতিগুলো কার্যকর হয়নি। কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে RAW-এর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে।
মোদির নেতৃত্বে “নতুন ভারত”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এমন একজন নেতা হিসেবে, যিনি ভারতের শত্রুদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে দৃঢ় ও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণকারী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে RAW-এর বহিঃসীমা কার্যক্রমের প্রশংসা করা হয়েছে, যা পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে ক্ষুব্ধ করেছে।
পাকিস্তানের উদ্বেগ ও সমালোচনা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বারবার দাবি করেছেন যে, ভারতের এই কর্মকাণ্ড তাদের গোয়েন্দা সংস্থার দক্ষতা চ্যালেঞ্জ করেছে। তারা অভিযোগ করেন, এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং মোদি সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার। পাকিস্তানের ISI-এর মহাপরিচালক নাদিম আনজুম এই বিষয়ে CIA-এর পরিচালক উইলিয়াম বার্নসের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সার্বিক মূল্যায়ন
বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই ছায়াযুদ্ধে জড়িত, যা তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানো হয়। এই হত্যাকাণ্ডগুলি শুধুমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার অংশ নয়, বরং উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে।
Leave a Reply