চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক সেন্টার জানিয়েছে, নেপালের সীমান্ত সংলগ্ন দিংরি কাউন্টিতে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে।
মঙ্গলবার সকালে চীনের দূরবর্তী তিব্বত অঞ্চলে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা অন্তত ১২৬ জনে দাঁড়িয়েছে, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
“মঙ্গলবার সকাল ১১:০০ জিএমটি পর্যন্ত মোট ১২৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে এবং আরও ১৮৮ জন আহত হয়েছে,” সিনহুয়া সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে।
এর আগে সিনহুয়া জানায়, “মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ৫৩ জনের মৃত্যু এবং ৬২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ৯:০৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প তিব্বতের শিগাতসে শহরের দিংরি কাউন্টিতে আঘাত হানে।”
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক সিসিটিভি প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে ভূমিকম্প পরবর্তী ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দেয়াল ভেঙে যাওয়া এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িগুলোর চিত্র দেখা গেছে।
চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক সেন্টারের (CENC) তথ্যমতে, ভূমিকম্পটি নেপালের সীমান্তের কাছে দিংরি কাউন্টিতে ৬.৮ মাত্রার ছিল। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) ভূমিকম্পের মাত্রা ৭.১ হিসাবে রিপোর্ট করেছে।
“দিংরি কাউন্টিতে ভূমিকম্পে ৩২ জনের মৃত্যু ও ৩৮ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে,” সিনহুয়া আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সদর দপ্তরের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে।
ধ্বংসস্তূপ এবং হিমশীতল পরিস্থিতি:
সিসিটিভি জানিয়েছে, “দিংরি কাউন্টি এবং এর আশপাশের এলাকায় শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়, এবং উপকেন্দ্রের কাছে অনেক ভবন ধসে গেছে।”
সিনহুয়া আরও জানায়, “স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টাউনশিপের সাথে যোগাযোগ করে ভূমিকম্পের প্রভাব মূল্যায়ন করছে।”
দিংরিতে তাপমাত্রা মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (১৭.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) রয়েছে এবং সন্ধ্যার মধ্যে মাইনাস ১৮ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যেতে পারে বলে চীনের আবহাওয়া প্রশাসন জানিয়েছে।
তিব্বতের উচ্চভূমি অঞ্চলটি চীনা অংশে অবস্থিত, যেখানে মাউন্ট এভারেস্টের পাদদেশে প্রায় ৬২,০০০ মানুষের বসবাস।
CENC আরও জানিয়েছে, যদিও এই অঞ্চলে ভূমিকম্প সাধারণ বিষয়, মঙ্গলবারের ভূমিকম্প ছিল গত পাঁচ বছরে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।
নেপালে ও প্রতিবেশী অঞ্চলে প্রভাব:
ভূমিকম্প এবং পরবর্তী কম্পনে নেপালের কাঠমান্ডু এবং এভারেস্টের নিকটবর্তী লোবুচে অঞ্চলেও কম্পন অনুভূত হয়।
“এটি এখানে বেশ জোরে কাঁপলো, সবাই জেগে উঠেছে,” নেপালের নামচে অঞ্চলের সরকারি কর্মকর্তা জগৎ প্রসাদ ভুষাল জানান।
তবে এ পর্যন্ত নেপালে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রিশি রাম তিওয়ারি।
পূর্ববর্তী ভূমিকম্পের পরিসংখ্যান:
নেপাল একটি বড় ভূতাত্ত্বিক ফাটলের উপর অবস্থিত যেখানে ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট ইউরেশীয় প্লেটের দিকে ধাক্কা দেয়। ২০১৫ সালের ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে নেপালে প্রায় ৯,০০০ মানুষের মৃত্যু এবং ২২,০০০ এর বেশি আহত হন।
চীনে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের ভূমিকম্পে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় গানসু প্রদেশে ১৪৮ জনের মৃত্যু হয় এবং হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।
২০১৪ সালের পর এটি ছিল চীনের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প। ওই বছর দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশে ৬০০ জনের বেশি মানুষ মারা যায়।
Leave a Reply