ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পাইয়ে দিতে ক্ষমতার অপব্যবহার।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, শেখ হাসিনা যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তার মেয়েকে এই উচ্চপদে নিয়োগের জন্য প্রভাব খাটান।
সায়মা ওয়াজেদ, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। তার মা শেখ হাসিনা তাকে অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক বাংলাদেশ জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব দেন। পরে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন, ২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতের নয়া দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কমিটির ৭৬তম অধিবেশনে সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক নির্বাচিত হন সায়মা ওয়াজেদ। অভিযোগ উঠেছে, তার এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটানো হয়েছে এবং এতে একাধিক নীতিগত অনিয়ম হয়েছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সেই দায়িত্ব নেন।
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলছে। এর মধ্যে রয়েছে তার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে জমি আত্মসাৎ, অর্থ পাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ।
অন্যদিকে, সাবেক মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারসহ ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগও দুদকের নজরে রয়েছে।
২০২৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। বর্তমানে শেখ হাসিনা দিল্লিতে অবস্থান করছেন, যেখানে তার মেয়ে সায়মাও আছেন ডব্লিউএইচওর দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দপ্তর ভারতের দিল্লিতে।
দুদক জানিয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের জন্য বিশেষ একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ তদন্তে সঠিক তথ্য উদঘাটনে সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুদক।
এ অভিযোগ ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলেও সমালোচনা উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থায় রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
দুদকের এই উদ্যোগকে বর্তমান সরকারের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তদন্তের ফলাফলে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
Leave a Reply