জ্বালাময়ী বক্তৃতায় মালদ্বীপের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু তার দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সৈন্যদের সরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। পরিবর্তে তিনি চীনের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করেন যা ভারতের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী, এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা করেন।
২০২৩ সালের শেষের দিকে মোহাম্মদ মুইজ্জু ভারতের জন্য একটি সমস্যায় পরিণত হন।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (RAW)-এর নির্দেশে কাজ করা এজেন্টরা মালদ্বীপের বিরোধী নেতাদের সঙ্গে গোপনে আলোচনা শুরু করেন মুইজ্জুকে অপসারণের সম্ভাবনা নিয়ে। আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই একটি পরিকল্পনা তৈরি হয়।
গোপন ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা:
একটি অভ্যন্তরীণ নথি, যার শিরোনাম ছিল “গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণ উদ্যোগ,” ওয়াশিংটন পোস্ট প্রাপ্ত এই নথিতে মালদ্বীপের বিরোধী রাজনীতিবিদরা মুইজ্জুর নিজ দলের সদস্যসহ ৪০ জন সংসদ সদস্যকে ঘুষ দিয়ে তাকে অভিশংসিত করার প্রস্তাব দেন। পরিকল্পনায় ১০ জন শীর্ষ সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তা এবং তিনটি প্রভাবশালী অপরাধী দলের জন্য অর্থ প্রদান করার কথাও উল্লেখ ছিল।
এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ছিল ৮৭ মিলিয়ন মালদ্বীপি রুপি (৬ মিলিয়ন ডলার), যা ভারত থেকে সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
কিন্তু কয়েক মাসের আলোচনা সত্ত্বেও ষড়যন্ত্রকারীরা অভিশংসনের জন্য যথেষ্ট ভোট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন, এবং ভারত এই পরিকল্পনায় আর্থিক সহায়তা বা সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
ভারত, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক মঞ্চে একটি প্রধান শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় তার কৌশলগত অবস্থান জোরদার করার চেষ্টা করছে।
মালদ্বীপ, যা ভারত মহাসাগরে একটি কৌশলগত স্থানে অবস্থিত, এ অঞ্চলের সামুদ্রিক বাণিজ্য এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ” এর অংশ হিসেবে দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোতে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প চীনের উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে।
ভারত মনে করে, মালদ্বীপে চীনের প্রভাব ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং কৌশলগত ভারসাম্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ফলে, ভারত তার ঐতিহাসিক প্রভাব ধরে রাখতে এবং মালদ্বীপকে তার প্রভাবের সীমানায় রাখতে সক্রিয় হয়েছে।
মুইজ্জুর পূর্বসূরি ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ ছিলেন ভারতের মিত্র। তার শাসনামলে ভারত মালদ্বীপে অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করেছিল এবং একটি ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। তবে, মুইজ্জুর ক্ষমতায় আসার পর এই সম্পর্ক জটিল হয়ে ওঠে।
মুইজ্জুর চীনমুখী নীতিগুলো ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি এ অঞ্চলে চীন ও ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার একটি প্রতিফলন।
মালদ্বীপে ক্ষমতা নিয়ে এই লড়াইটি এশিয়ায় বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার একটি উদাহরণ। ভারত ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকবে, কারণ উভয় দেশই আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে আগ্রহী।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
Leave a Reply