প্রায় এক শতাব্দী ধরে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে সিরিয়ার জনগণ। এই সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল ১৯২৫ সালের গ্রেট সিরিয়ান বিদ্রোহের মাধ্যমে, যা ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। ইদলিব এবং দারা থেকে বিরোধীদের অগ্রগতির দুই সপ্তাহের মধ্যে বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং সিরিয়ায় শাসন পরিবর্তন অনেকের কাছে একটি বিস্ময়কর ঘটনা। ত্রয়োদশ বছরের গৃহযুদ্ধের পরে আসাদের পতন ঘটলেও, এটি আসলে প্রায় ১০০ বছর আগে শুরু হওয়া একটি প্রক্রিয়ার ফলাফল।
২০১৬ সালের মার্চ মাসে সিরিয়ার বিদ্রোহের পঞ্চম বার্ষিকীতে অনেকেই মনে করেছিলেন যে বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছে। আরব বসন্ত আরব শীতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, সিরিয়ার ক্ষেত্রে এই বিপ্লব যেন এক শীতল কেস হয়ে গিয়েছিল।
বিপ্লবের প্রকৃত বিষয় বুঝতে হলে শুধুমাত্র ভৌগোলিক বিশ্লেষণ নয়, বরং সামাজিক এবং রাজনৈতিক গতিশীলতার ওপর নজর দিতে হবে। সিরিয়ার ক্ষেত্রে, এই স্থায়িত্বের প্রমাণ হলো সিরিয়ার বিরোধী পক্ষের দৃঢ়তা, যারা প্রবাসে থেকেও আসাদ শাসনের নৃশংসতার কথা স্মরণে রেখেছেন।
৮ ডিসেম্বরের সাম্প্রতিক বিপ্লবের সামাজিক ও রাজনৈতিক গতিশীলতা আগামী দশকে বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্লেষণ করা হবে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে আমরা সব পক্ষের বর্ণনা পড়তে পারব যে কিভাবে বিপ্লবের এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছিল এবং আসাদ পরিবারের প্রতিক্রিয়া কী ছিল।
যা ইতিমধ্যে পরিষ্কার, তা হলো সিরিয়ার বিপ্লবকে ২০১১ সালে শুরু হওয়া একটি ঘটনা হিসেবে নয়, বরং ১৯২৫ সালে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া একটি প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা হিসেবে বিশ্লেষণ করা উচিত।
বিপ্লব একটি কাঠামো, একটি ঘটনা নয়। এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলে। বিপ্লবের নিজস্ব চেতনা, দৃষ্টি এবং শ্রবণশক্তি থাকে। সময় উপযুক্ত হলে, এটি হঠাৎ করে শুরু হয় এবং সবাইকে বিস্মিত করে। সিরিয়ার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে।
সিরিয়ার বিপ্লবকে আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে দেখা যেতে পারে। ২০১১ সালে আরব বসন্ত যখন দামাস্কাসে পৌঁছায়, তখন থেকেই ২০২৪ সালে আসাদের পতন অবধি এই গতিবেগ এবং স্মৃতি সক্রিয় ছিল।
যদিও এই ঘটনাকে টিউনিশিয়া এবং মিশরের মতো দ্রুত শাসন পরিবর্তনের সাথে তুলনা করা যায় না। জিন এল আবেদিন বেন আলি টিউনিশিয়ায় ১৯৮৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত শাসন করেছেন। হোসনি মোবারক মিশরে ১৯৮১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু সিরিয়ার ক্ষেত্রে বিপ্লবের এই প্রক্রিয়া বহু বছর ধরে সক্রিয় ছিল।
সিরিয়ার দুই আসাদের শাসনের মধ্যেও জনগণের স্বাধীনতার জন্য এই আহ্বান অব্যাহত ছিল। বাশার আল আসাদ এবং তার পিতা হাফেজ আল আসাদ একই শাসন কাঠামো রক্ষা করলেও, জনগণের দাবি ছিল স্বাধীনতা, সমতা এবং ভ্রাতৃত্ব।
বাশার আল আসাদের পতনের মাধ্যমে আরব বসন্ত একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। সিরিয়ার নতুন সরকার এখন দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক ব্যবস্থাকে নতুনভাবে সাজানোর চেষ্টা করছে। তবে এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া নয়।
সিরিয়ার বিপ্লব আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব। যদিও আরব বসন্তের পরবর্তী অধ্যায় নিয়ে আলোচনা চলছে, কিন্তু এই মুহূর্তে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অঞ্চলজুড়ে বিপ্লব রপ্তানির কোনো চেষ্টা করেনি।
১৯৪৬ সালের ১৭ এপ্রিল ফরাসি সেনাদের প্রত্যাহারের মাধ্যমে সিরিয়া স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। কিন্তু প্রকৃত স্বাধীনতা এসেছে ২০২৪ সালে, যখন বাশার আল আসাদ দামাস্কাস থেকে পালিয়ে মস্কোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
Leave a Reply