অদম্য রাজুব ভৌমিক বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ অফিসার । নোয়াখালীর কবিরহাটে জন্ম নেওয়া এই শিক্ষানুরাগী অদম্য অধ্যবসায় দিয়ে গড়েছেন এক অনন্য ইতিহাস। যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করে তিনি গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড। এর মধ্যে রয়েছে চারটি মাস্টার ডিগ্রি ও চারটি ডক্টরেট ডিগ্রি। ইউরোপের ‘অফিশিয়াল ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’ তাকে বিশ্বের সর্বোচ্চ শিক্ষিত পুলিশ অফিসার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই এই অভাবনীয় অর্জন সম্পন্ন করেন তিনি।
প্রাথমিক শিক্ষাজীবন: ব্যর্থতা থেকে উঠে দাঁড়ানো
রাজুবের শিক্ষাজীবনের শুরুটা ছিল সহজ নয়। কুমিল্লা বোর্ডের আওতাধীন ওটারহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি, তবে জিপিএ ছিল মাত্র ৩.৫। এরপর ২০০৪ সালে সরকারি মুজিব কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করেন। কিন্তু হাল না ছেড়ে ২০০৫ সালে আবার পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন।
“অপারেশন ডেভিল হান্ট”: ডিআইজি ও তিন পুলিশ সুপার আটক
২০০৫ সালের শেষের দিকে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন গ্রহণ করেন রাজুব। দেশটিতে গিয়ে প্রথম কাজ শুরু করেন ম্যাকডোনাল্ড রেস্তোরাঁয়। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকেই ২০০৬ সালে শেফার্ড ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হন। দুর্ভাগ্যবশত, কম সিজিপিএ’র কারণে ২০০৭ সালের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাদ পড়েন। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
নতুন পথচলা: ব্যর্থতা থেকে সফলতার দিকে
২০০৭ সালের শেষ দিকে আবারও নতুন করে স্নাতক ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা শুরু করেন। অবশেষে ২০১১ সালে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এতে তার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে এবং দেরি না করেই মাস্টার্সে ভর্তি হন।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স হওয়ায় ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ হয়। তবে মাস্টার্সের কোর্সগুলো কোনোমতে পাস করলেও শেষ পরীক্ষায় পরপর দুবার ব্যর্থ হন। তৃতীয়বারও ফেল করলে আজীবন এই ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ হারানোর শঙ্কা ছিল। ভাগ্যক্রমে শেষ চেষ্টায় তিনি মাস্টার্স শেষ করেন। আত্মবিশ্বাস বাড়তেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন পিএইচডি করার।
অভূতপূর্ব অধ্যবসায়: পরপর ১১ বার প্রত্যাখ্যান, তবুও হার না মানা
পিএইচডির শুরুটা ছিল বেশ ভালো। কোর্সওয়ার্ক ভালোভাবে শেষ করলেও গবেষণা পর্বে এসে বাধার মুখে পড়েন। একজন ডক্টরেট শিক্ষার্থীর তিনজন গবেষণা উপদেষ্টা থাকেন, যাদের অনুমোদনেই চূড়ান্ত ডিগ্রি মেলে। কিন্তু রাজুবের ক্ষেত্রে উপদেষ্টারা তাকে পরপর ১১ বার প্রত্যাখ্যান করেন! এতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও দমে যাননি।
পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে আরেকটি পিএইচডিতে ভর্তি হন এবং দুটি ডক্টরেট একসঙ্গে চালিয়ে যেতে থাকেন। দ্বিতীয় ডিগ্রি শেষ করে তৃতীয় পিএইচডিতে ভর্তি হন, আর তখনই প্রথম পিএইচডি সম্পন্ন হয়।
অদম্য রাজুব ভৌমিক : চারটি ডক্টরেট, চারটি মাস্টার্স এবং বিশ্বরেকর্ড
এভাবে একসঙ্গে একাধিক ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে ৩৪ বছর বয়সে চারটি মাস্টার ও চারটি পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন রাজুব ভৌমিক। এই কৃতিত্বের জন্য ইউরোপের ‘অফিশিয়াল ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’ তাকে বিশ্বের সর্বোচ্চ শিক্ষিত পুলিশ অফিসার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তাকে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষিত ব্যক্তি বলেও অভিহিত করা হয়।
বহুমুখী প্রতিভা: পুলিশ, অধ্যাপক, লেখক ও অভিনেতা
বর্তমানে রাজুব নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে সার্জেন্ট হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি সিটি ইউনিভার্সিটিতে আইন ও অপরাধ বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক এবং সেন্ট এলিজাবেথ ইউনিভার্সিটিতে মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপনা করছেন।
শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, তিনি অভিনয় ও লেখালেখিতেও পারদর্শী। ‘আয়না সনেট’ ও ‘আয়না সংগীত’-এর জনক ড. রাজুব ভৌমিকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২০টিরও বেশি।
এই অদম্য মানুষ প্রমাণ করেছেন, অধ্যবসায় ও নিষ্ঠার মাধ্যমে যে কেউ যেকোনো সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পারে।
Leave a Reply