বাংলাদেশে পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে সাভার ও নারায়ণগঞ্জ থেকে দুজন নিরীহ যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। এ ঘটনায় তৈরি করা হয়েছে একাধিক মিথ্যা মামলা। তদন্তের নামে হয়রানি চলছে আরও ছয় যুবককে নিয়ে, যাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো স্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় এটিইউ জানায়, সাভার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ফয়সাল নামে এক যুবককে। অথচ এলাকাবাসী ও তার পরিচিতজনরা জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সম্মানিত ব্যবসায়ী এবং ধার্মিক মানুষ হিসেবে পরিচিত। এমনকি মামলার প্রধান আসামি বানানো হলেও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারের সময় তাৎক্ষণিক প্রমাণ ছিল না। তাই সাভার থানা পুলিশও প্রথমে তাকে ছেড়ে দেয়। পরে এটিইউ তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য নতুন করে মামলা করে।
মামলায় আরও অভিযুক্ত করা হয় আল ইমরান ওরফে ইঞ্জিনিয়ার ইমরান হায়দার, রেজাউল করিম আবরার, আসিফ আদনান, জাকারিয়া মাসুদ ও সানাফ হাসানকে। স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, এরা সবাই নিজেদের মতো পড়াশোনা ও জীবিকার সঙ্গে যুক্ত, ধর্মীয় অনুশাসন মানেন ঠিকই, তবে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা কখনোই ছিল না। মামলার বাদী এটিইউ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানও গণমাধ্যমে এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
এরপর আবার নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় শামিন মাহফুজ নামের এক ব্যক্তিকে। তাকেও মিথ্যা মামলার অংশ বানিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। অথচ মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও নন তিনি। পুলিশের তদন্তে কোনো যথাযথ তথ্য ছাড়াই তাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।
সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, এই মামলায় পাকিস্তানে জিহাদে নিহত চার যুবকের নাম তুলে, দেশে ২৫ যুবক নাশকতা করতে যাচ্ছে বলে গল্প সাজানো হয়েছে। অথচ তাদের নাম, পরিচয়, কর্মকাণ্ড — কিছুই প্রকাশ করা হয়নি।
এই ঘটনা গোটা এলাকায় ক্ষোভ, আতঙ্ক ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ‘জঙ্গি’ বানানোর এই কায়দা এখন পুরনো। যেখানে ইসলামি শরিয়াহ মানা বা ধার্মিক হওয়াও আজ ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দিতে এবং ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ সাফল্যের নামে দেশে নিরীহ ধর্মপ্রাণ ও তরুণদের টার্গেট করা হচ্ছে।