বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর তথ্যমতে, ‘সুপিরিয়র কমান্ড’ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার চার্জশিট আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। প্রসিকিউশন টিম জানিয়েছে, বিচারের প্রথম ধাপে সুপিরিয়র কমান্ডের দায়ী ব্যক্তিদের বিচারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা যৌথভাবে ভিডিও ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহের কাজ শেষ করেছে। অনেক ঘটনায় অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে, এবং একাধিক ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সূত্রমতে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যার নির্দেশনা দেওয়ার অডিও ও ভিডিও প্রমাণ পাওয়া গেছে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও তার ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য সংগ্রহ করেছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (রেড অ্যালার্ট) জারির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সুপিরিয়র কমান্ড পর্যায়ের আসামিদের বিচারের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি, মে মাসের মধ্যেই অন্তত তিনটি মামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।”
তিনি জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ব্যাপকতা বিবেচনায় মামলাগুলোর তদন্ত সময়সাপেক্ষ হলেও, বিচারে গতি আনতে সুপিরিয়র কমান্ডারদের মামলাগুলো দ্রুত এগিয়ে আনা হয়েছে।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর গণহত্যা এবং ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের আন্দোলনে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত এবং ৩০ হাজারের বেশি আহত হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে।
ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চার্জশিট দাখিলের পর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগের ভিত্তিতে সন্তুষ্ট হলে চার্জ গঠনের নির্দেশ দেওয়া হবে। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা এবং যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়া এগিয়ে চলবে। বিচার শেষ হলে রায় ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার পরিবারগুলো এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা এই বিচার প্রক্রিয়ার দিকে প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছেন। তাদের আশা, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন :
https://dailysabasbd.com/uprising-poverty…omic-uncertainty/