নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস: এখনো কমেনি প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণে প্রসূতিমৃত্যুর ঘটনা - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
লিখছে এআই, ঘুমাচ্ছে মস্তিষ্ক নবীজিকে কটূক্তির অভিযোগে বাবা-ছেলে আটক, উত্তপ্ত লালমনিরহাট সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের পর্যালোচনায় ১৪ সদস্যের কমিটি গঠন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে যুদ্ধের বাজি খেলায় ট্রাম্প: বিজয় না বিপর্যয়? অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সংস্কারসহ ১২৫ দফা রাবি ছাত্রশিবিরের ইরানে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ট্রাম্প ভারতে নারীদের একাকী ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র আকাশপথে আঘাত, পাতালে প্রতিরোধ: ইরান-যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সংঘাতের এক বিপজ্জনক সন্ধিক্ষণ মার্কিন হামলার পরও তেজস্ক্রিয়তা বাড়েনি: জাতিসংঘ পরমাণু সংস্থা (IAEA) ইউএস নিউজ বেস্ট গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ে রাবির বড় অগ্রগতি

নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস: এখনো কমেনি প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণে প্রসূতিমৃত্যুর ঘটনা

সাবাস বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫
  • ২৪ বার দেখা হয়েছে

আজ ২৮ মে, নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য— ‘মাতৃস্বাস্থ্যে সমতা; বাদ যাবে না কোনো মা’। দেশের প্রসূতিমৃত্যুর বর্তমান চিত্র, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাস্তবতা, এই প্রতিপাদ্যকে সামনে এনে যেন আরও করুণভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা।

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তারই একটি বাস্তব উদাহরণ। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এবং বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এত দূরত্ব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এই উপজেলাতেই প্রসূতিদের জন্য ভরসার একমাত্র জায়গা এই হাসপাতালটি।

কিন্তু, এখানে নেই রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা, নেই পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র তিনজন। ফলে, প্রসবজনিত জটিলতা দেখা দিলে রোগীকে জেলা বা বিভাগীয় হাসপাতালে পাঠাতে হয়। এই যাত্রাপথেই ঝরে যাচ্ছে অনেক প্রসূতির প্রাণ।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিয়া আফরিন জানান, “চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি রক্তক্ষরণ বা অন্যান্য জরুরি জটিলতা মোকাবিলার মতো ব্যবস্থাও এখানে নেই। জোড়াতালি দিয়ে চলতে হচ্ছে।” এরকম পরিস্থিতি শুধু সাঘাটাতেই নয়, দেশের অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই বিরাজমান।

বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ১৬৩ জন নারীর মৃত্যু হয় প্রসবজনিত কারণে। এর মধ্যে ৩১ শতাংশ মৃত্যু হয় রক্তক্ষরণে, ২৩ শতাংশ খিঁচুনিতে এবং ২১ শতাংশ নানা জটিলতায়। সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো, রক্তক্ষরণজনিত মৃত্যুর ৮৫ ভাগ ঘটে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই।

একই সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ উপজেলা হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ রক্তসঞ্চালনের ব্যবস্থা রয়েছে। গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন ব্যবস্থাপনায় অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ, যেমন ইউটেরোটনিক ও অ্যান্টিকনভালস্যান্ট, অনেক হাসপাতালেই অনুপস্থিত। আবার, মাত্র ৩৫ শতাংশ উপজেলায় অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি সেবাও নিয়মিতভাবে পাওয়া যায়।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মোহাম্মদ জুবায়ের চিশতি বলেন, “প্রসূতি মৃত্যুর মূল কারণ প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ। এই সমস্যা আমরা বহু বছর ধরে জানি, কিন্তু কার্যকর কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৪০০ উপজেলায় রক্তসঞ্চালনের ব্যবস্থা থাকলেও, পূর্ণাঙ্গ সুবিধাসহ সেবা দেওয়া যায় মাত্র ৭০টি উপজেলায়। সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও এই সংকট নিরসনে জনগণের সচেতনতার অভাবও একটি বড় কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এখানে ১,৭৮৪টি সন্তান প্রসব হয়েছে, যার মধ্যে ৭টি মৃত্যু ঘটেছে। গর্ভকালীন ও পরবর্তী জটিলতার সময় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে না পারাই এর প্রধান কারণ।

এ বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভকালীন সেবা, জরুরি প্রসব ব্যবস্থাপনা এবং প্রসব-পরবর্তী পর্যায়ের চিকিৎসা মানোন্নয়নই হতে পারে প্রসূতিমৃত্যু রোধে মূল কৌশল। অন্যথায়, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি লাখে প্রসূতিমৃত্যু ৭০ জনে নামিয়ে আনার টার্গেট অর্জন একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT