নোটিশ:
শিরোনামঃ

দেশীয় প্রযুক্তিতে রেল টার্ন টেবিল উদ্ভাবন করে আন্তর্জাতিক সম্মান পেলেন প্রকৌশলী তাসরুজ্জামান বাবু

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৩০ বার দেখা হয়েছে
টার্ন টেবিলের সাথে রেলওয়ের প্রকৌশলী তাসরুজ্জামান বাবু

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকৌশলী মো. তাসরুজ্জামান বাবু দেশীয় প্রযুক্তিতে রেলের ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর টার্ন টেবিল উদ্ভাবনের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্টেভি অ্যাওয়ার্ড ইনকরপোরেশন ২০২৫ সালের এশিয়া-প্যাসিফিক স্টেভি অ্যাওয়ার্ডসে তাঁকে ‘মোস্ট ইনোভেটিভ টেকনোলজি লিডার অব দ্য ইয়ার’ ক্যাটাগরিতে সিলভার স্টেভি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে।

স্টেভি অ্যাওয়ার্ডসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ১৭ এপ্রিল বিজয়ীদের নাম প্রকাশ করা হয়। আগামী ১৩ মে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। একই ক্যাটাগরিতে এবারে আই বি এম, গুগল, অ্যামাজনসহ বিশ্বের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্ভাবকেরাও সম্মাননা পেয়েছেন।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগে বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনে সফলতা দেখিয়েছেন তাসরুজ্জামান। তার উদ্ভাবিত স্বয়ংক্রিয় টার্ন টেবিলটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। এর আগে দেশের সব টার্ন টেবিলই ছিল ব্রিটিশ আমলের ও বিদেশ থেকে আনা।

প্রায় ৩০ বছর পর লালমনিরহাট রেলওয়েতে স্বল্প খরচে, পুরোনো যন্ত্রাংশ পুনর্ব্যবহার করে তৈরি করা এই স্বয়ংক্রিয় টার্ন টেবিল রেলওয়ের চাকার ক্ষয় কমাতে ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ১৪ টন ওজনের ব্রিজসহ এই টার্ন টেবিলটির ধারণক্ষমতা প্রায় ৩৫০ টন। এতে ইঞ্জিন ও কোচের চাকা সমানভাবে ক্ষয় হয় এবং চালকের দিক পরিবর্তনের সুবিধা তৈরি হয়।

এই উদ্ভাবনের জন্য ২০২৪ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবকের স্বীকৃতি এবং জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনআইডিও) থেকে সম্মাননাও পান তিনি। স্টেভি অ্যাওয়ার্ডের জুরিবোর্ড তাঁকে দক্ষিণ এশিয়ার ‘প্রথম অটোমেটেড টার্ন টেবিল’ উদ্ভাবকের স্বীকৃতি দিয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সন্তান মো. তাসরুজ্জামান বাবুর জন্ম ৩১ জানুয়ারি। বাবা মরহুম আবু আশফাকুর রহমান অনু এবং মা তাহমিনা বেগম। ৩৫তম বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়েতে সহকারী যান্ত্রিক প্রকৌশলী পদে কর্মরত তিনি।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পরে এডিবি-জেএসপি স্কলারশিপে জাপানের ন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ (GRIPS) থেকে পাবলিক পলিসিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

পেশাগত জীবনে তিনি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তবে শুধু প্রযুক্তিই নয়, বাল্যকাল থেকেই লেখালেখির প্রতি গভীর অনুরাগ তাঁর। হাইস্কুল জীবন থেকেই গল্প, কবিতা, সায়েন্স ফিকশন, কার্টুন, প্রবন্ধ লিখে জাতীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। অভিনয়, আবৃত্তি, বিতর্ক, বক্তৃতা ও আঁকাআঁকিতেও ছিলেন সক্রিয়। তার প্রথম সায়েন্স ফিকশন বই ‘তৃতীয় অনুভূতি’ ২০২৩ সালের বইমেলায় প্রকাশের পর ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায় এবং প্রথম সংস্করণ দ্রুতই নিঃশেষ হয়ে যায়। উনার লিখিত আরো বইগুলো হলো –  অশোক সিক্রেটস, কবিতা শুনে যে কাছে আসে, সে কুৎসিত হতে পারে না, বিয়ন্ড দ্য ইউনিভার্স। ২০২৫ এ সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ – ইনকিউবেটর

তাসরুজ্জামান বাবুর সাফল্যে খুশি তাঁর পরিবার। মা তাহমিনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে ১২ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছে। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করেছি। আজ তার এই অর্জনে আমি খুবই খুশি। দেশ ও মানুষের জন্য সে আরও ভালো কিছু করুক, এটাই আমার দোয়া।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী মো. সাদেকুর রহমান জানান, ‘তাসরুজ্জামান বাবুর উদ্ভাবন রেলওয়ের কাজে গতি এনেছে। তার এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের গর্বিত করেছে।’

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT