নোটিশ:

শবে বরাতকে জাতীয় অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৩২ বার দেখা হয়েছে
national-museum-ich-inventory,বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, শবে বরাত উদযাপন, জাতীয় ইনভেন্টরি, ইউনেস্কো, আন্তর্জাতিক অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, তাসরুজ্জামান বাবু, লালমনিরহাট, হারানো মসজিদ, ধর্মীয় দিবস, ইতিহাস, গবেষণা, নফল রোজা, হালুয়া-রুটি, মিষ্টির দোকান, মসজিদ সাজানো, মাগরিব নামাজ, ইফতার পার্টি, রেলিজিয়াস ট্যুরিজম, পুরান ঢাকা, নবাবরা, ফেন্সি রুটি, শিরমাল রুটি, বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, শবে বরাতের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব. ,জাতীয় অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য,শবে বরাত,
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর শবে বরাতকে জাতীয় অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে

শবে বরাতকে জাতীয় অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। গত  ১২ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখ থেকে পুরান ঢাকার বর্ণাঢ্য শবে বরাত উদযাপনকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের হেরিটেজ হাব এর জাতীয় ইনভেন্টরির তালিকায় অন্তর্ভূক্তকরণের মাধ্যমে প্রকারান্তরে সারাদেশে প্রায় চৌদ্দশ বছর ধরে উদযাপিত এই ধর্মীয় দিবসের স্বীকৃতি মিলেছে। জাতীয় ইনভেন্টরিতে অন্তর্ভূক্তকরণের এই আবেদন করেন বাংলাদেশ রেলওয়ে, লালমনিরহাট এর ক্যারেজ এন্ড ওয়াগন বিভাগের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী জনাব তাসরুজ্জামান বাবু। এর আগে গতবছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশের প্রথম অটোমেটেড রেলওয়ে টার্নটেবিল উদ্ভাবন করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন এই রেল কর্মকর্তা, সম্প্রতি যার স্বীকৃতি মিলেছে জাতিসংঘের সংস্থা UNIDO থেকেও।

জনাব তাসরুজ্জামান বাবু জানান, ইউনেস্কোর কাছে তিনি সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে শবে বরাতের গুরুত্ব উল্লেখ করে ইমেইল করলে ইউনেস্কো থেকে তাকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদনের কথা জানানো হয়। বিষয়টির খোঁজখবর নিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন যে আন্তর্জাতিক অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে দিনটিকে আগে জাতীয়ভাবে অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত হতে হবে। যথারীতি এই রেল কর্মকর্তার আবেদনটি  পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর  গত ১২ অক্টোবর শবে বরাতকে জাতীয় অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দান করে এবং এর ফলে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট জাতীয় অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২১টি (বিস্তারিত: https://heritagehub.gov.bd/HeritageInfoes?heritageTypeId=1)।

গবেষক খাজা শামসুদ্দিন মিরার মতে, ত্রয়োদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে শবে বরাত পালিত হয়ে আসছে। তবে ঐতিহাসিক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম মনে করেন, উপমহাদেশে শবে বরাত পালনের প্রচলন অষ্টম শতাব্দীতে মোহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু ও মুলতান জয়ের পর শুরু হয়।  শবে বরাত নিয়ে গবেষণা করে তাসরুজ্জামান বাবু বলেন, লালমনিরহাটে ৬৮৮-৬৮৯ সালের দিকে হারানো মসজিদ খ্যাত সাহাবিদের নির্মিত মসজিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। যেহেতু শবে বরাত প্রধানত একটি ধর্মীয় দিবস, এই কারণে তখন থেকেই বাংলাদেশে শবে বরাত পালিত হওয়ার কথা। এদিকে আনুমানিক ৬১৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে চট্টগ্রাম বন্দরে (তৎকালীন সমুন্দর বন্দর) একদল সাহাবির আগমনের খবরও সুবিদিত। কাজেই বাংলাদেশে শবে বরাত সপ্তম শতাব্দী থেকেই পালিত হয়ে আসছে বলে অনুমিত হয়। তবে এমন আড়ম্বরপূর্ণ ও সাংস্কৃতিক আমেজঘন পদ্ধতিতে শবে বরাত কেবল বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানেই পালিত হয়, যা আরব বিশ্বেও পালিত হয় না। এখানে শবে বরাত উপলক্ষ্যে নফল রোজা ও অন্যান্য ধর্মীয় ইবাদতের পাশাপাশি হালুয়া-রুটি বিতরণের মাধ্যমে দিনটি উদযাপিত হয়। ঘরে ঘরে তৈরি করা হয় বুটের ডাল, ময়দা, সুজি এবং গাজরের হালুয়া। এই হালুয়া পরে বরফি আকারে ছাঁচ দিয়ে কেটে মেহমানদের সামনে পরিবেশন করা হয়। মিষ্টির দোকানে পাওয়া যায় মাশকাতের হালুয়া। স্বচ্ছল পরিবারগুলোতে হালুয়া-রুটির পাশাপাশি রান্না করা হয় পোলাও, কোরমা, ভুনা খিচুড়ি এবং গরু বা হাঁসের মাংস। এদেশে শবে বরাত উপলক্ষ্যে মসজিদ, মাজারগুলো লাল-সবুজ কাগজ দিয়ে বিশেষভাবে সাজানো হয়, করা হয় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। সন্ধ্যার পর থেকে মাগরিব ও এশার নামাজের সময় মুসল্লিদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। মুসল্লিরা নতুন পোশাক পরে, আতর-সুরমা ব্যবহার করে মসজিদে যান, নামাজ শেষে বিশেষ জিকির-মিলাদ-মোনাজাত প্রভৃতি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। মোনাজাত শেষে বিভিন্ন মসজিদ-মাজারে তবারক হিসেবে বিরিয়ানি বা সিন্নি বিতরণ করা হয়। এই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলো এশার নামাজের পর থেকে শুরু হয়ে ফজর পর্যন্ত চলতে থাকে। ঐতিহাসিক মুনতাসির মামুনের মতে, বাংলাদেশে শবে বরাতের উদযাপনে নতুন মাত্রা যোগ করেন পুরান ঢাকার নবাবরা। পুরান ঢাকায় শবে বরাতের একটি বিশেষ আকর্ষণ হলো ফেন্সি রুটি ও শিরমাল রুটি।

শবে বরাত আমাদের জন্য বয়ে আনতে পারে রেলিজিয়াস ট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনা, যা থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে রাষ্ট্র। লক্ষণীয় যে ইফতার পার্টি বর্তমানে ইউনেস্কো স্বীকৃত আন্তর্জাতিক অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যার দাবিদার তুরস্ক, উজবেকিস্তান, আজারবাইজান, ও ইরান; যার দাবিদার বাংলাদেশও হতে পারত। শবে বরাতকে ইউনেস্কোভুক্ত আন্তর্জাতিক অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে আবেদন করতে হবে এবছর মার্চ মাসের মধ্যে। সরকার এই ব্যাপারে কতটা আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা-ই এখন দেখার বিষয়।

  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর সর্বশেষ নিউজ পড়তে ক্লিক করুন: সর্বশেষ
  • দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ এর ফেসবুক পেজটি ফলো করুন: dailysabasbd

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT