সাগরে দূষণ রুখতে রোবটিক মাছ ‘গিলবার্ট’, বাংলাদেশেও ব্যবহারের সম্ভাবনা - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
ভুয়া ফটোকার্ডে ভুগছে গণমাধ্যম, পথ দেখাচ্ছে সাবাস বাংলাদেশ এর স্মার্ট ফটোকার্ড  আসিফ আদনানদের নামে জিহাদি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলা: আবারও জঙ্গী কার্ড? ভাড়ার তর্কে ইবি ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ, জনি পরিবহনের বাস আটক টিটিপি সংশ্লিষ্টতার ধুয়ো তুলে ইসলামপন্থী যুবকদের মামলা-গ্রেফতার হয়রানি: জঙ্গী নাটকের নতুন অধ্যায় ইউটিউবের বড় নীতিমালা পরিবর্তন – মৌলিকতা ছাড়া আর আয় নয় প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার বিদেশে পড়াশোনার নামে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ, ক্যামব্রিয়ান চেয়ারম্যান বাশার ১০ দিনের রিমান্ডে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদতবার্ষিকীতে চার উপদেষ্টাসহ দিনব্যাপী কর্মসূচি সাগরে দূষণ রুখতে রোবটিক মাছ ‘গিলবার্ট’, বাংলাদেশেও ব্যবহারের সম্ভাবনা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালে ভেঙে পড়লো সিলিং, অল্পের জন্য রক্ষা পেল শিক্ষার্থীরা

সাগরে দূষণ রুখতে রোবটিক মাছ ‘গিলবার্ট’, বাংলাদেশেও ব্যবহারের সম্ভাবনা

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫
  • ৩৬ বার দেখা হয়েছে

বিশ্বজুড়ে সমুদ্র ও নদীর পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৫.২৫ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিকের টুকরো ভাসছে বিশ্বের জলাভূমিতে। এসবের ক্ষুদ্র আকারের মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা শুধু জলজ প্রাণী নয়, বরং মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এমন ভয়াবহ দূষণ সংকট থেকে মুক্তি দিতে অভিনব এক প্রযুক্তির উদ্ভাবন করলো যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সারে’র গবেষকরা। তারা তৈরি করেছে দেখতে একেবারে সামুদ্রিক মাছের মতো এক বিশেষ রোবটিক মাছ, যার নাম ‘গিলবার্ট’। এই মাছ সাগরে ভেসে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক খেয়ে ফেলছে, আবার সেখান থেকেই শক্তি উৎপাদন করে আরও দীর্ঘ সময় কাজ চালিয়ে যেতে পারছে — যা বিশ্ব সমুদ্র দূষণ মোকাবিলায় এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রোবটিক মাছ ‘গিলবার্ট’-এর দৈর্ঘ্য ৫০ সেন্টিমিটার, দেখতে অনেকটা গোলাপি স্যালমন মাছের মতো। এর নমনীয় লেজ এবং গিলের মতো কাঠামো পানির নিচে সাবলীলভাবে সাঁতরে বেড়ায়। বিশেষ ফিল্টার সিস্টেমের মাধ্যমে ২-৫ মিলিমিটার পর্যন্ত আকারের প্লাস্টিক কণা গিলে ফেলে অভ্যন্তরীণ চেম্বারে জমা করে। বিস্ময়কর বিষয় হলো, এই মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকেই মাছটি বিদ্যুৎ তৈরি করে নিজের চলার শক্তি যোগায়। ফলে বাইরের কোনো চার্জ ছাড়াই এটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাগরে ভেসে থেকে দূষণ মুক্ত করতে পারে। পানির নিচে যত বেশি প্লাস্টিক পায়, তত বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বেশি সময় কাজ চালিয়ে যেতে পারে।

২০২২ সালের ‘ন্যাচারাল রোবোটিক্স কনটেস্ট’-এ ইউনিভার্সিটি অব সারের রসায়নের শিক্ষার্থী এলেনর ম্যাকিনটোশ এই রোবটিক মাছের নকশা করেন। এরপর বিজ্ঞানীদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এটি বাস্তবে রূপ নেয়। বর্তমানে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূল, মেরিন কনজারভেশন জোন এবং বন্দর এলাকায় প্রোটোটাইপ পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এতে দেখা গেছে, একবার চার্জ না করেই এই রোবটিক মাছ ১২ ঘণ্টায় প্রায় ২ কেজি পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক সংগ্রহ করতে পারে। এবং চেম্বার পূর্ণ হলে নিজে থেকেই পানির ওপরে উঠে আসে। তখন রোবটের ভেতরের প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে পুনরায় রিসাইক্লিং করে নতুন করে সাগরে নামিয়ে দেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রযুক্তি শুধু যুক্তরাজ্য নয়, বরং দূষণপ্রবণ দেশগুলোর জন্যও হবে আশীর্বাদ। ইউনিভার্সিটি অব সারির রোবোটিক্স লেকচারার রবার্ট সিডল জানান, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তিকে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় করা হবে এবং দলগতভাবে একাধিক রোবটিক মাছ উপকূল ও দূষিত অঞ্চল পরিষ্কারে নামবে। এতে করে ডুবুরি, বড় জাহাজ বা ম্যানুয়াল ক্লিনআপ কার্যক্রমের প্রয়োজন অনেকাংশে কমে যাবে। সবচেয়ে বড় খবর হলো, ‘গিলবার্ট’-এর ৩ডি প্রিন্ট ডিজাইন এখন ওপেন সোর্স হিসেবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিশ্বের যেকোনো গবেষক বা প্রতিষ্ঠান এটি ডাউনলোড করে নিজেদের মতো করে উন্নত সংস্করণ বানাতে পারবে।

বিশ্ব পরিবেশবাদী মহল এই উদ্ভাবনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। খালিফা ইউনিভার্সিটির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার লুডোভিক ডুমি জানান, মানুষ বছরে গড়ে ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা অনিচ্ছাকৃতভাবে খেয়ে ফেলে। যার ফলে মানুষের দেহে ক্যানসার, লিভার, কিডনি, এমনকি স্নায়বিক রোগও বাড়ছে। এই রোবটিক মাছ সেই দূষণ সরাসরি উৎস থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

সবচেয়ে আশার কথা হলো, ইউনিভার্সিটি অব সারের গবেষক দল বাংলাদেশসহ সমুদ্রসীমা থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ খতিয়ে দেখছে। কারণ, বঙ্গোপসাগর ও দেশের নদ-নদীতেও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই প্রযুক্তি বাংলাদেশে আনা গেলে পরিবেশ সংরক্ষণ ও সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষায় তা হবে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT