জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে শুরুতে এ নিয়ে আলোচনা হলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার কারণে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সরকার এখন সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা যে ভবিষ্যতের কথা কল্পনা করেছিলেন, তা বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। তারবিহীন বিদ্যুৎ স্থানান্তরের প্রযুক্তি এখন পরীক্ষামূলক পর্যায় পেরিয়ে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েভ ইনক., জাপানের স্পেস পাওয়ার টেকনোলজিস এবং নিউজিল্যান্ডের এমরড-এর মতো কোম্পানিগুলো মাইক্রোওয়েভ ও লেজার-ভিত্তিক শক্তি সংক্রমণ এবং মহাকাশ থেকে সৌরশক্তি প্রেরণের মতো উদ্ভাবনী পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে।
ইতিমধ্যে নিউজিল্যান্ডে এমরড তারবিহীন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে, যা দুর্গম অঞ্চলে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়া, বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) জন্য তারবিহীন চার্জিং ব্যবস্থা এবং রাস্তার নিচে চার্জিং প্রযুক্তির উন্নয়নও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে, যা ইভি ব্যবহারে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।
তবে, এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। জনসাধারণের মধ্যে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় থাকলেও প্রযুক্তির দক্ষতা ও ব্যয় একটি বড় বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এরপরও ক্যালটেক ও পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান তারবিহীন বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইন্ডাকটিভ চার্জিং, মহাকাশ-ভিত্তিক সৌরশক্তি এবং রেকটেনা-চালিত বিদ্যুৎ গ্রিড প্রযুক্তি টেসলার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে সহায়ক হবে।
সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে এই প্রযুক্তি প্রচলিত বিদ্যুৎ গ্রিডের সীমাবদ্ধতা দূর করে শিল্পখাতের চেহারা বদলে দিতে পারে এবং টেকসই শক্তির এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। এমন এক সময় আসতে পারে, যখন বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য কোনো তার বা প্লাগের প্রয়োজনই থাকবে না—শুধু সুইচ অন করলেই মিলবে শক্তি!
সূত্র: ক্যালটেক, টেনেসি টেক ও পপুলার মেকানিক্স
নির্বাচন কমিশনও সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে নয়। কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের মূল লক্ষ্য এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সংসদ নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও তার ভাষণে সংসদ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। তবে সারা দেশে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় প্রশাসনের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সরকারের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের একটি চিন্তা তৈরি হয়।
গত ৮ জানুয়ারি ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের (ইআইবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ারের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। পরদিন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানান, জনগণের কাঙ্ক্ষিত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে চিন্তা করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে জনমতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো গত ডিসেম্বরের ২০ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত একটি জরিপ পরিচালনা করে। এতে ৬৪.৯৭ শতাংশ নাগরিক সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের সব স্তরের নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেন। এই জরিপের ভিত্তিতে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশ করে।
তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে তীব্র মতভেদ দেখা দেয়। বিএনপি, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ কয়েকটি দল সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিরোধিতা করে। তাদের দাবি, এতে সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হবে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে অবস্থান নেয়।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও এই ইস্যুতে দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ব্যক্তিগত মতামত জানিয়ে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সহায়ক হতে পারে।
এদিকে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার খবর ছড়িয়ে পড়লে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এর বিরোধিতা করে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, এ ধরনের নির্বাচন রাজনৈতিক সহিংসতা উসকে দিতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের অবস্থান, নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সুপারিশ ও রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভক্তির কারণে সরকার স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে এসেছে। সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এখন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পরিবর্তে প্রশাসক নিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সিটি করপোরেশন, জেলা ও উপজেলা পরিষদ এবং পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও সমাজের বিশিষ্টজন ও রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকেও প্রশাসক নিয়োগের চিন্তা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার সচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।