বাংলাদেশ-নেপাল বিদ্যুৎ আমদানির ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। শনিবার (১৫ জুন) দিবাগত রাত ১২টা থেকে নেপাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। ভারতের ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে এই বিদ্যুৎ দেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) জানায়, প্রথম দিনে প্রতি ঘণ্টায় ৩৮ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি বছর পাঁচ মাস ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে নেপাল।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির এই উদ্যোগ আসলে দীর্ঘদিনের আলোচনার ফল। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালের ভারত সফরে বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এরপর ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এই চুক্তি অনুযায়ী, নেপালে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ ভারতের মুজাফফরপুর-বাহারামপুর হয়ে বাংলাদেশের ভেড়ামারা গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৪ মার্কিন সেন্ট বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ টাকা ৮৭ পয়সা।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর প্রতীকীভাবে একদিনের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছিল নেপাল। এবার তা পূর্ণাঙ্গভাবে পাঁচ বছরের জন্য চালু হলো।
বিদ্যুৎ খাত-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ বাংলাদেশের গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ, নেপালে এ সময় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হয় চাহিদার তুলনায় বেশি। আবার শীত মৌসুমে যখন নেপালের জলাধার জমে যায় এবং উৎপাদন কমে আসে, তখন বাংলাদেশের চাহিদাও কম থাকে। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ নেপালে রপ্তানি করার সুযোগ পাবে।
এ ছাড়া, নেপালের সুঙ্কোশি-৩ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। বিষয়টি নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।
বিদ্যুৎ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা ‘সাবাস বাংলাদেশ’কে জানান, এই চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বিদ্যুৎ বিনিময়ে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে বিদ্যুৎ আমদানি-রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে বলে আশাবাদী উভয় দেশ।