মুরাদনগরে মাদক অভিযোগে মা-ছেলে-মেয়েকে গণপিটুনিতে হত্যা - দৈনিক সাবাস বাংলাদেশ
নোটিশ:
শিরোনামঃ
ইসির ওয়েবসাইটে আবারও ফিরল আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীক ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে পুড়ে ছাই হচ্ছে ২৭ হাজার শিশুর খাবার রাশিয়ার ড্রোন হামলায় কেঁপে উঠল ইউক্রেন, পাল্টা হামলা চালালো কিয়েভ যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় ৭.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি গ্রেনেড হামলা: তারেক রহমানসহ আসামিদের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু বৃষ্টিতে ভেজা এবং হাঁচি-কাশি-জ্বর মাদ্রিদে মুসলিমদের জন্য ১৫,০০০ বর্গমিটার কবরস্থান অনুমোদন সত্য গোপনে এক ধাপ এগিয়ে ‘প্রথম আলো’ ও ‘ঢাকা ট্রিবিউন’ ৪৮তম বিশেষ বিসিএস (স্বাস্থ্য )পরীক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথমবার সিরিজ জয় করে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

মুরাদনগরে মাদক অভিযোগে মা-ছেলে-মেয়েকে গণপিটুনিতে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫
  • ৫৭ বার দেখা হয়েছে

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ভয়াবহ গণপিটুনির ঘটনায় এক পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার আকবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন রোকসানা আক্তার রুবি, তার ছেলে রাসেল মিয়া এবং মেয়ে জোনাকি আক্তার। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেলেও তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, রোকসানা আক্তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা করার অভিযোগ ছিল। এই নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা চলছিল। একাধিকবার সামাজিকভাবে নিষেধ করা হলেও তারা মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, মুরাদনগর ও বাঙ্গরা বাজারসহ আশপাশের থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে গ্রামবাসীর একাংশ দলবদ্ধ হয়ে ওই পরিবারের বাড়িতে যায়। বাড়ির ভেতর ঢুকে প্রথমে রোকসানা আক্তারকে মারধর শুরু করা হয়। তার চিৎকার শুনে ছেলে রাসেল মিয়া ও মেয়ে জোনাকি আক্তার এগিয়ে এলে তাদেরও ধরে গণপিটুনি দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলেই রোকসানা আক্তার, রাসেল মিয়া এবং জোনাকি মারা যান। আহত নারীকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এ খবর মুহূর্তের মধ্যে গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে বলছেন, বহুদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছিল তারা। বহু অভিযোগের পরও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় অবশেষে গ্রামবাসী নিজেরাই প্রতিশোধ নেয়। ঘটনার পর পুরো কড়ইবাড়ি গ্রামে আতঙ্ক আর শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে।

খবর পেয়ে বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বেশিরভাগ গ্রামবাসী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতদের বিরুদ্ধে মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ জমে ছিল। ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। কারা কারা এই হামলায় অংশ নিয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, এলাকাবাসীর বক্তব্য এবং ঘটনার প্রকৃত কারণ জানার জন্য তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নিহতদের মরদেহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি চলছে। এদিকে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও তদন্তের পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় পুরো এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে মাদকের অভিশাপের জন্য পুরো গ্রাম জর্জরিত ছিল। পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল না পাওয়ায় অবশেষে গ্রামবাসী নিজেদের হাতে বিচার চালিয়েছে। তবে এভাবে গণপিটুনিতে প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে প্রশাসন ও মানবাধিকারকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ, কারা এই হামলায় যুক্ত ছিল এবং এর পেছনে কোনো উসকানি ছিল কিনা, সেটিও তদন্তের আওতায় আনা হবে।

মুরাদনগর ও বাঙ্গরা বাজার এলাকায় দিনভর আতঙ্ক আর থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মাদকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ আর প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে অনেকের মন্তব্য। পুলিশ জানিয়েছে, অপরাধীদের খুঁজে বের করতে দ্রুত অভিযান চালানো হবে।

এদিকে নিহতদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারিতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গ্রামের প্রবীণরা বলছেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনা এর আগে এই গ্রামে ঘটেনি। সবাই বলছে, মাদক থেকে গ্রামকে রক্ষা করতে হবে, তবে এভাবে বিচার হওয়া উচিত হয়নি। ঘটনাটি নিয়ে সর্বত্র আলোচনা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

এই ঘটনায় পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৪-২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT