একটুখানি শব্দও হয়তো আপনার কানে পৌঁছায়নি। হয়তো আপনি জানলেনই না, কোন দেয়ালের কোণায় বসে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছিল এক ‘মশা’। তবে সেটি কোনো সাধারণ মশা নয়—এটি চীনের তৈরি এক ভয়ংকর রোবটিক ড্রোন, যার আকার ঠিক একটি আসল মশার মতোই!
মাত্র ০.৬ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এই অতি ক্ষুদ্র ড্রোনটি সম্প্রতি প্রকাশ্যে এনেছে চীনের ন্যাশনাল ডিফেন্স টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। দেখতে একেবারে আসল মশার মতো, ডানাও নড়ে টিনটিন করে। ওজন এতটাই হালকা যে পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকলে কেউ বুঝতেই পারবে না—ওটা কোনো জীবন্ত প্রাণী নয়, নজরদারি যন্ত্র!
ড্রোনটিতে রয়েছে একটি ক্ষুদ্রাকৃতির ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন। ফলে এটি এমন সব জায়গায় ঢুকে নজরদারি করতে পারবে, যেখানে সাধারণ ড্রোনের প্রবেশ অসম্ভব। এই বৈশিষ্ট্যই একে করে তুলেছে ভবিষ্যতের গুপ্তচরবৃত্তির জন্য আদর্শ হাতিয়ার।
তবে আতঙ্কে চমকে ওঠার আগে একটু স্বস্তির খবর—এটি এখনো কেবলমাত্র পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। বাস্তব পরিবেশে এর ব্যাটারি লাইফ, বাতাস প্রতিরোধ, ও ডেটা পাঠানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ এখনো কাটিয়ে ওঠা হয়নি। তাই আপনি এখনো আপনার দেয়ালে বসা ‘মশা’কে সন্দেহ করতে শুরু করবেন না।
কিন্তু ভাবুন তো—একটা দিন যদি সত্যিই আসে, যেদিন শত্রুপক্ষের নজরদারি যন্ত্র আপনাকে ফলো করবে কোনো মশার ছদ্মবেশে?
এই ‘মশা ড্রোন’ নতুন হলেও এর পেছনের ভাবনাটি খুব একটা নতুন নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই ছদ্মবেশী নজরদারির চেষ্টা চালিয়ে গেছে বড় বড় সামরিক শক্তিগুলো। ১৯৭০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘ইনসেক্টোথোপটার’ নামের যন্ত্র তৈরি করেছিল, যা দেখতে ছিল একটি লিবেলুলার মতো। যদিও সে প্রকল্প বাতিল হয়, ধারণাটি থেকে যায়।
গত দশকে মার্কিন DARPA (Defense Advanced Research Projects Agency) বেশ কয়েকটি পোকা-আকৃতির নজরদারি ডিভাইস তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল, যেগুলোর মধ্যে ছিল ‘হামিংবার্ড ড্রোন’ ও ‘রোবটিক বিটল’। তবে চীনের এই মশা ড্রোনটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষুদ্র ও সবচেয়ে বাস্তবসম্মত।